দেশজুড়ে
সাভারে মহাসড়ক ভাড়া দিয়ে আয় লাখ লাখ টাকা!
আজহারুল ইসলাম শিমুল, সাভারঃ সাভারে মহাসড়কের একাংশ ভাড়া দিয়ে মাসে ১৫ লক্ষ টাকা আয় করছে একটি চক্র। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে নিরবে চলছে এ চাঁদাবাজি। শুধু মহাসড়কই নয়, ফুটপাত সম্পূর্ণ দখল করে রেখেছে এই সংঘবদ্ধ চক্র। বিষয়টির পুলিশ-প্রশাসন জানে বলেও জানা গেছে।
ঢাকার সাভার বাসস্ট্যান্ড একটি জনবহুল এলাকা। এই এলাকায় ফুটপাত দখল করে হকারদের ভ্রাম্যমাণ দোকান চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। মহাসড়ক ৮ লেনে উন্নীত হওয়ার পরে হকারদের কাছে দখল হয়ে গেছে তার অংশ বিশেষ। বাহারী দোকান রয়েছে এই ফুটপাত ও মহাসড়কে। তৈরি পোশাক, স্টেশনার, কাঁচাবাজার, মাছের বাজার, চায়ের দোকান, খাবার ও ফলের দোকান।
জনবহুল এলাকায় একজন ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী সব দোকানই রয়েছে ফুটপাত ও মহাসড়কে। বিভিন্ন সময় পুলিশ ফুটপাতে অভিযান পরিচালনা করলেও সংঘবদ্ধ চক্রের কারণে সকল অভিযানই ব্যর্থ হয়েছে।
সম্প্রতি ফুটপাত দখলমুক্ত করার সময় হকারদের রোষানলে পড়ে পুলিশ বাহিনী। হকাররা এ সময় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি ‘মীমাংসা’ করে দেন। এরপর থেকেই মহাসড়কে ও ফুটপাতে পুলিশি অভিযান স্থগিত হয়ে যায়।
ভুক্তভোগীরা জানান, মহাসড়ক ও ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারীরা। সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে বড় বড় মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো প্রতিমাসে ক্ষতি গুনছে হকারদের কারণে। ফুটপাতে সব ধরনের পণ্য বিক্রি হওয়ায় খদ্দেররা মার্কেটে প্রবেশ না করে ফুটপাত থেকেই কেনাকাটা করে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতের সাধারণ হকারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ফুটপাতে দোকানভেদে বাসস্ট্যান্ডের কথিত হকার্স লীগ নেতাদের অগ্রিম দিতে হয় ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এরপর প্রতিদিন একটি দোকান থেকে চাঁদা আদায় করা হয় ৩০ থেকে ২শ’ টাকা করে। এভাবে শুধু মহাসড়কের পশ্চিম অংশের ৭শ’ দোকান থেকে মাসে গড়ে প্রায় ১৫ লক্ষাধীক টাকা আদায় করে থাকে সংঘবদ্ধ চক্র।
সাধারণ হকাররা আরও অভিযোগ করেন, আনোয়ার আকন্দ ও লিটন খানের নেতৃত্বে সাভার বাসস্ট্যান্ডে গড়ে উঠেছে একটি বাহিনী। শুধুমাত্র ফুটপাত ও মহাসড়ক ভাড়া দিয়ে এই শ্রেণীর লোকজন মাসে আয় করছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অনেক হকার অগ্রিম টাকা দিয়ে ফুটপাতে পজিশন নিলেও অনেক সময় বেশি টাকা পেয়ে তা অন্যকে দিয়ে দেন আনোয়ার আকন্দ ও লিটন খান।
সাভারের রেডিও কলোনী থেকে ওলাইল ও হেমায়েতপুরের সকল ফুটপাত ও মহাসড়কের একই অবস্থা বলে জানান সচেতন নাগরিক সমাজের অনেকেই। একেক অংশের একেকজন দায়িত্বে থেকে ফুটপাত ও মহাসড়ক ভাড়া দিয়ে আসছে চক্রটি। এমনকি সাভারের উপজেলা পরিষদ ফটক ও পৌরসভা ভবনের সামনে মহাসড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে বাজার। এতে করে ক্ষীণ হয়ে গেছে মহাসড়ক। প্রতিনিয়ত যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা হকার্স লীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন খান মুঠোফোনে বলেন, আমি আমার সভাপতির বক্তব্য ছাড়া ভাই কাউকে কিছু বলতে পারবো না। আপনি আমার অফিসে আসেন চা খেয়ে যান। না হলে আমি আপনার অফিসে আসি, আপনার অফিস কোথায়?
উপজেলা হকার্স লীগের সভাপতি আনোয়ার আকন্দ এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, আমরা যে স্ট্যান্ড থেকে টাকা তুলি এটা সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগ, থানা-পুলিশ সকলেই জানে। আর এটা আজকাল থেকে উঠাচ্ছি না। দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে। এসব দোকান থেকে আমরা টাকা কালেকশন করি দল চালানোর জন্য। আমরা যে টাকা নেই সাভারের সকলেই জানে। এখানে অঘোষিতভাবে আমরা টাকা কালেকশন করে থাকি।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর স্থানীয় সহ-সভাপতি খন্দকার আলমগীর হোসেন নিরব বলেন, সাভারের মহাসড়ক ও ফুটপাত যেভাবে দখল হয়ে আছে, তাতে জনগণের চলাচলের রাস্তা আছে কিনা তা সন্ধিহান। এ কারণে পথচারীদের চলতে হচ্ছে মহাসড়ক দিয়ে। পথচারীরা মহাসড়ক ব্যবহার করায় প্রতিনিয়ত ট্রাফিক জ্যাম ও সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, আমি অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকি। সাভার বাসস্ট্যান্ডে দুইজন টিআই বসে আছে। আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে বিভিন্ন সময় হকার নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
/আরএম/