দেশজুড়ে
দুর্নীতির অভিযোগে টাইগার আইটিকে নিষিদ্ধ করলো বিশ্বব্যাংক
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) মুদ্রণসংক্রান্ত প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটিকে সাড়ে নয় বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্বব্যাংক।
আর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে সাড়ে ছয় বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত এপ্রিলে বিশ্বব্যাংকের সেনশনস বোর্ড এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
ওই ঘটনায় ইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত তৎকালীন কর্মকর্তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশনের সময় এ অনিয়ম হয়।
স্মার্টকার্ড তৈরির প্রকল্প-আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)-এর ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘বর্তমানে ভোটার রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম, ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট, আঙুলের ছাপ মেলানোর এএফআইএস সার্ভারসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলো টাইগার আইটি করছে। বিশ্বব্যাংকের এ নিষেধাজ্ঞার ফলে এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চলমান সম্পর্কের কথা নতুন করে বিবেচনা করতে হবে।’
বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় স্মার্টকার্ড প্রকল্পটি শুরু হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) ঋণ ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা।
এ প্রকল্পের অধীনে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়ার কথা ছিল। স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের লক্ষ্যে ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিস নামে এক কোম্পানির সঙ্গে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি।
বিশ্বব্যাংকের অভিযোগে বলা হয়েছে, টাইগার আইটি ও এর চেয়ারম্যান কেনাকাটা ও বিভিন্ন দরপত্রে অশুভ আঁতাত করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।
গত ২৪ এপ্রিল বিশ্বব্যাংক বিষয়টি প্রকাশ করে। নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের বোর্ড বিভিন্ন পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে ওয়াশিংটনে এ নিয়ে শুনানি হয়।
অভিযোগ রয়েছে, স্মার্টকার্ড তৈরির জন্য আবেদনকারী একাধিক যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে ইসি আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নামগ্রস্ত ওবার্থুরকে কাজ দেয়।
এ জন্য ইসি সচিবালয় দরপত্রের শর্ত এমনভাবে তৈরি করে, যাতে ওবার্থুর ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে না পারে। ওবার্থুর স্থানীয় সহযোগী টাইগার আইটির পরামর্শে ইসি এ কাজ করে।
টাইগার আইটিকে নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক বলেছে, স্মার্টকার্ডের দরপত্রে টাইগার আইটি প্রভাব বিস্তার করেছিল। তাদের যোগসাজশেই দরপত্রের শর্তাবলি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে না পারে। ইসির দরপত্রের শর্তাবলি কেমন হবে, তা দরপত্র প্রকাশের আগেই একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করেছিল টাইগার আইটি। এ ঘটনায় ইসির কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।