দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
বরাদ্দ থাকলেও নেই সরবরাহ, সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চড়া দাম
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক:রাজশাহীতে আলু আবাদের ভরা মৌসুমেও সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চাষিরা সারের অভাবে জমি তৈরির পরও বীজ রোপণ করতে পারছেন না। ফলে অনেকে এবার আলু চাষ না করে সরিষাসহ অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারের বরাদ্দ থাকলেও সরবরাহ খুবই কম। এছাড়া পরিবহণ ঠিকাদার ও ডিলার সিন্ডিকেটের কারণেও সারের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন হাতঘুরে সার চলে যাচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানে। এসব সারই কৃষকদের কিনতে হচ্ছে সরকারি দামের চেয়ে বেশি দামে।
কৃষকদের অভিযোগ, জেলা ও উপজেলায় সার মনিটরিং কমিটি থাকলেও ডিলারদের সঙ্গে কৃষি অফিসের মাঠকর্মীদের জোগসাজশ থাকায় অসাধু ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকরা সারের জন্য হাহাকার করছেন। কোথাও কোথাও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বস্তায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ডিসেম্বরে রাজশাহীতে ডিএপি সারের চাহিদা ছিল ১৭ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন। সেখানে বরাদ্দ এসেছে আট হাজার ১২৪ মেট্রিক টন। অন্যদিকে এমওপির (মিউরেট অব পটাশ) চাহিদা ছিল ১৮ হাজার ৩৭২ মেট্রিক টন। বরাদ্দ পাওয়া গেছে চার হাজার ২৭৮ মেট্রিক টন এবং ট্রিপল সুপার ফসফেট-টিএসপির চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ২১৬ মেট্রিক টন। বরাদ্দ এসেছে মাত্র দুই হাজার ৭৩৭ মেট্রিক টন সার।
তিনি আরও জানান, ডিসেম্বরের জন্য বরাদ্দ পাওয়া সার জেলার ২১৮ জন ডিলারের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত সরবরাহ এসেছে তিন হাজার ২৫৪ মেট্রিক টন ডিএপি, দুই হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন এমওপি ও দুই হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন টিএসপি। গুদামে মজুত না থাকায় বরাদ্দ করা সার ডিলারদের মাঝে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জেলার কেশরহাট এলাকার কৃষক রায়হান আলী জানান, গত বছর তিনি আট বিঘা জমিতে আলু করেছিলেন। এবার সার সংকটের কারণে করছেন তিন বিঘায়। কোথাও সার মিলছে না। আবার দামও অনেক বেশি। প্রতি বস্তায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিয়েও সার পাওয়া যাচ্ছে না।
ভুক্তভোগী কৃষকরা আরও জানান, কৃষক পর্যায়ে ৫০ কেজির এক বস্তা ডিএপির সরকারি দাম এক হাজার ৫০ টাকা। এ সার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। টিএসপির সরকারি দাম এক হাজার ২৫০ টাকা হলেও খুচরা বিক্রেতারা আদায় করছেন এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। পটাশের সরকারি দাম এক হাজার টাকা, তবে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে কৃষকরা কিনছেন এক হাজার ৩৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায়।
রাজশাহীর তালতলী বাজারের খুরচা সার বিক্রেতা ইব্রাহিম হোসেন জানান, ১৬ ডিসেম্বর তিনি একজন ডিলারের কাছ থেকে কিছু সার কিনেছেন। তার কাছে দাম ধরা হয়েছে ডিএপির প্রতি বস্তায় এক হাজার ৩৫০ টাকা, টিএসপি এক হাজার ৬৫০ টাকা ও এমওপি এক হাজার ২০০ টাকা। তার গাড়ি ভাড়া লেগেছে বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা। এখন কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন বস্তায় ১৫০ টাকা বেশি দামে।
গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বিএডিসির সার ডিলার মেসার্স হিমেল ট্রেডার্সের মালিক হুমায়ুন কবির বলেন, গত ১৫ দিনে বরাদ্দ হওয়া ডিএপির ৪৫ মেট্রিক টনের জায়গায় পেয়েছেন মাত্র সাত মেট্রিক টন, এমওপির ২৮ মেট্রিক টনের স্থলে পেয়েছেন আট মেট্রিক টন এবং টিএসপির ২০ মেট্রিক টনের জায়গায় পেয়েছেন মাত্র পাঁচ মেট্রিক টন। ২ ডিসেম্বরের পর গুদাম থেকে তিনি আর কোনো সারই পাননি।
ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার সভাপতি আবু কালাম বলেন, গোডাউনে সার সরবরাহ নেই। ডিলাররাই যদি না পায় কৃষক পাবেন কীভাবে। কোনো সিন্ডিকেট হচ্ছে না বলে দাবি করেন সার ডিলার সমিতির এই নেতা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৩৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হচ্ছে। আলু আবাদকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের সারের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল কিছুটা বেশি। কিন্তু বরাদ্দ অনেক কম পাওয়া গেছে। কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা সার সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, বরাদ্দ ও সরবরাহ কম আসায় এই সংকট।
/একে