প্রধান শিরোনামবিশ্বজুড়ে

তবে কি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালাল ইরান!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ইরানের সেমনান প্রদেশে গত ৫ অক্টোবর ৪ দশমিক ৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সেমনানের মরু অঞ্চলে এই ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছিল, এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। তবে ইরান জানায়, এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ১২ কিলোমিটার।

এই ভূমিকম্প নিয়ে যে বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তা হলো, এটি শুরু হওয়ার আগে একেবারেই কোনো ধরনের লক্ষণ দেখায়নি। এমনকি ভূমিকম্পের মূল ধাক্কার পরও আর কোনো কম্পন দেখা যায়নি।

আর্মেনিয়ার একটি ভূমিকম্প পরিমাপক স্টেশন সেমনানে একবার মাত্র ভূমিকম্প রেকর্ড করেছে। সাধারণত, ভূমিকম্প হলে একাধিক কম্পন অনুভূত হয়। এ থেকে বিশেষজ্ঞরা ধরে নিচ্ছেন যে, এখানে ভূগর্ভে একটি ব্যাপক বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে অতীতে কোনো দেশই এত গভীরে গিয়ে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়নি। কারণ, এটি খুবই ব্যয়বহুল। সাধারণভাবে, পারমাণবিক বোমার পরীক্ষার জন্য আদর্শ গভীরতা হিসেবে ২৪০০ মিটার থেকে ৩০০০ মিটার ধরা হয়।

আমরা যদি এই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রের দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, সেমনানে যে ভূমিকম্প হয়েছে তার উপকেন্দ্র একটি ফল্ট লাইন বা ভূচ্যুতি রেখার ওপর অবস্থিত। তবে ইরান যদি সত্যিই এই বিস্ফোরণের বিকিরণ ও অন্যান্য চিহ্ন লুকিয়ে ফেলতে চায় তাহলে ১০-১২ কিলোমিটার একটি ভালো গভীরতা। তবে আসল বিষয়টি কেবল সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার বা বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোই বলতে পারবে।

ইরানের পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার গুঞ্জনটি এমন এক সময়ে এল যখন, পুরো মধ্যপ্রাচ্যই উত্তপ্ত হয়ে আছে। ইসরায়েলি হামলায় ইরানের মিত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রধানেরা এবং ইরানি কয়েকজন জেনারেলও নিহত হয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যকে নিয়ে কাজ করা সংবাদমাধ্যম দ্য ক্রেডল ইরানি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পরিচালনার সম্ভাবনা সত্যি সত্যিই উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। সিরিয়ার একটি সূত্রের বরা দিয়ে দ্য ক্রেডল জানিয়েছে, ইরান তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি শক্তিশালী পারমাণবিক সম্ভাবনা বিকাশের চেষ্টা করবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি উপদেষ্টা কামাল খারাজির গত ৩ অক্টোবর সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ইসরায়েল ইরানের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করলে তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক বোমা বানানোর সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে ইরানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে আমাদের সামরিক মতবাদ পরিবর্তন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’ উল্লেখ্য, ইরানে পারমাণবিক বোমা তৈরির বিষয়টি ফতোয়া দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা ও পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের মতে, তেহরান ‘পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে।’ ২০১৫ সালে ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করার পদক্ষেপের বিনিময়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ওপর বিধিনিষেধ স্বীকার করেছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে চুক্তিটি বাতিল করেন।

ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। তবে পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য অন্তত ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে হয়। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মানদণ্ড অনুসারে, ইরানের কাছে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম আছে তা যদি আরও সমৃদ্ধ করা হয় তবে দুটি পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরি করা সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইরানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে কয়েক মাস এবং বছর লাগতে পারে। সেই সতর্কবার্তা দেওয়ার পর দীর্ঘ কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে। এর আগে, ২০১৭ সালে ইরানে হওয়া এক ভূমিকম্পকেও ইরানের পারমাণবিক পরীক্ষাও বলা হয়।

তথ্যসূত্র: রুশ সংবাদমাধ্যম প্রাভদা

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close