দেশজুড়ে
ইতিহাস বড় নির্মম, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় : শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ছাত্র-জনতার প্রবল গণবিস্ফোরণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইতিহাস বড় নির্মম, আল্লাহতালার বিচার বড় নির্মম। আল্লাহতালা চোখের সামনে দেখিয়ে দিলেন যে ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার ও নৈরাজ্য ঠেকাতে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। দুদিনের অবস্থান কর্মসূচির আজ ছিল শেষ দিন।
মির্জা ফখরুল বলেন, খুনি শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়েছে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অমানবিক নির্যাতন করেছে। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। শত শত নেতা কর্মীকে গুম করেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে মাত্র দুদিনে ২৮ হাজার নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করেছিল। বিএনপির নেতাকর্মীরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এতো প্রাণ দিয়েছে, যা ইতিহাসে বিরল। অনেক মা তার ছেলে হারিয়েছে, বোন তার ভাই হারিয়েছে।
ছাত্র আন্দোলনে নিহত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আবু সাইদ গরীব ঘরের সন্তান। টিউশন করে লেখাপড়ার খরচ চালাত।
শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস বড় নির্মম, আল্লাহ তালার বিচার বড় নির্মম। আল্লাহ তালা তাদেরকে চোখের সামনে দেখিয়ে দিলো যে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ক্ষণস্থায়ী। কোরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের ফকির করতে পারি। ফকিরকে আমীর করতে পারি। জীবিতকে মৃত করতে পারি, মৃতকে জীবিত করতে পারি।’ আল্লাহ তালার এ বাণী অস্বীকার করেছিলেন হাসিনা। সীমা লঙ্ঘন করেছিলেন তিনি। অহংকার, কী অহংকার! আল্লাহর কী হুকুম, তাকে পালিয়ে যেতে হলো।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন আবার সংখ্যালঘু নিয়ে নতুন একটা খেলা শুরু হয়েছে, কিন্তু এদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়। তারা আবার ষড়যন্ত্র করছে, কিছু একটা করে ভারতের সহায়তায় ফিরে আসতে চায়। এদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ৬৯, ৭১ দেখেছেন, ২৪ সাল দেখেছেন। দেখেছেন যে দেশের জনগণ কীভাবে জ্বলে উঠতে পারে। ভালোয় ভালোয় আত্মসমর্পণ করেন। যারা বাইরে আছেন এদিক-ওদিক করছেন ভালো হয়ে যান। আপনাদের কিন্তু বিচারের খুখোখুখি হতে হবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিরোধী ট্রাইব্যুনালে এদের বিচার করতে হবে। এরা অপরাধ করেছেন, গণহত্যা চালিয়েছেন। যারা লুণ্ঠন করেছেন, নির্যাতন করেছেন, হত্যা করেছেন, তাদের বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল, এ সরকারকে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করতে হবে। যতদিন তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে। অবশ্যই বর্তমান সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী কর্মকর্তা হয়েও যারা স্বৈরাচার সরকারের দোসর হয়ে কাজ করেছিলেন তাদেরকে বের করতে হবে, যারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী এই সরকারের হয়ে সরকারে বসে থেকে কাজ করেছেন তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিহতদের স্মরণে দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দলের সাধারণ শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।