দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
চাপ দেবেন না, দাবি আদায়ে সমাবেশ–ঘেরাও করবেন না, ধৈর্য ধরুন: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন–ঘেরাও করছেন। এমনকি এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন ড. ইউনূস। শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। স্মরণাতীত কালের ভয়াবহ বন্যায় যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন, যাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বা যাঁরা সর্বস্ব হারিয়েছেন, যাঁরা দুঃসহ জীবন যাপন করছেন—তাঁদের স্মরণ করেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র দুই সপ্তাহ শেষ হলো। কর্মযাত্রার প্রথম পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে আপনাদের কাছ থেকে যে সমর্থন পাচ্ছি, সে জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা অনুধাবন করছি যে আমাদের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা অনেক। এ প্রত্যাশা পূরণে আমরা বদ্ধপরিকর। যদিও দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রহীনতা, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গিয়েছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আমরা প্রস্তুত। আজ আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করতে আপনাদের সামনে এসেছি।’
সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনই সব দাবি পূরণ করার জন্য জোর করা, প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যক্তিবিশেষকে হুমকির মধ্যে ফেলা, মামলা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা, বিচারের জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে আগেই একধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা, তা থেকে বের হতে হবে। ছাত্র–জনতার বিপ্লবের গৌরব ও সম্ভাবনা এসব কাজে ম্লান হয়ে যাবে, নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টাও এতে ব্যাহত হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ–কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দেন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগত ভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করব। কিন্তু আমাদের ঘেরাও করে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না। সবাই মিলে তাদের বোঝান, তারা যেন এ সময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।’
দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের জীবন দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়ার আয়োজন করেছে সরকার। ভবিষ্যতে সব ধরনের বন্যা প্রতিরোধে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে যাতে যৌথভাবে নেওয়া যায়, সে আলোচনা শুরু করা হয়েছে। দেশের সকল বয়সের, সকল পেশার, সকল মতের, সকল ধর্মের সবাইকে বিনা দ্বিধায় এই সংগ্রাম যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’