দেশজুড়ে
‘দ্য মিরর এশিয়া” আন্তর্জাতিক সব সংবাদমাধ্যমকে পেছনে হঠাৎ আলোচনায়
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ফেসবুক পেজ থেকে শুরু করে কথিত অনেক সংবাদমাধ্যমও ছড়াচ্ছে গুজব, যা বিভ্রান্ত করছে সাধারণ মানুষকে। সম্প্রতি ‘দ্য মিরর এশিয়া’ নামের এক অনলাইন ‘সংবাদমাধ্যম’ বেশ আলোচনায় উঠে এসেছে। বিশেষ করে কোটা আন্দোলন এবং সরকারকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আলোচনায় এসেছে মিরর এশিয়া।
কিন্তু এটি আদৌ কোনো সংবাদমাধ্যম নাকি ব্যক্তিগত কোনো ব্লগ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা। এ নিয়ে অনলাইন ও অফলাইনে চলছে আলোচনার ঝড়।
সাইফুর রহমান নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন,
যেকোনো তথ্য চোখে পড়লে বিশ্বাস করার আগে একটু চেক করে নিই আমি। গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ নতুন এক পত্রিকার নাম চোখে পড়েছিল, দ্য মিরর এশিয়া। ভাবলাম যে একটু দেখিতো কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই পত্রিকা। দেখলাম ডোমেইন কেনা হয়েছে, ৩১ মে ২০২৪। বিবিসি, রয়টার্স, ডিডব্লিউ, আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে এই অল্প সময়ে পেছনে ফেলে দিয়েছে এই পত্রিকা।
ডোমেইন নাম বা ওয়েবসাইটের তথ্য খোঁজার সাইট ‘হু ইজ’-এর একটি সার্চ রেজাল্টের ছবি পোস্ট করে দ্য মিরর এশিয়ার ডোমেইন কেনা সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছেন সাইফুর।
পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘জার্মানি থেকে যেহেতু ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন এবং নিয়মিত সংবাদ পরিবেশন করে ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, ভাবছি জার্মান ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের কাছে একটা ইমেইল দিয়ে জেনে নেবো ওদের ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশন নম্বর।’
সাইফুর রহমানের মতে,
ইতোপূর্বে সুইডেন থেকে এমন একটি পত্রিকা বের হয়েছিল নরফিকা নামে। সেটাও সুইডিশ স্ক্যাটেভারকেটকে (ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ/অফিস) ইমেইল করে জানতে চাইবার কিছুদিন পর দেখি পত্রিকাটা ব্যক্তিগত ব্লগে পরিণত হয়ে গিয়ে এরপর একসময় উধাও হয়ে গেছে। অবশ্য ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ ইমেইলের জবাবে জানিয়েছিল ওই নামে কোনো সংবাদপত্রের রেজিস্ট্রেশন ছিল না তখন পর্যন্ত।
ফলে সাইফুর রহমানের দাবি সত্য হলে, দ্য মিরর এশিয়া আসলেই মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যম কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
নিজেদের সম্পর্কে কী বলছে মিরর এশিয়া?
ওয়েবসাইটে নিজেদের সম্পর্কে দ্য মিরর এশিয়া বলছে, তারা এশিয়াভিত্তিক একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম। ২০২৪ সালের ১ জুন স্বাধীন, নির্ভীক, নিরপেক্ষ এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার প্রতিজ্ঞা নিয়ে যার যাত্রা।
আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তীব্র গণতান্ত্রিক সংকট, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব, ভিন্ন মত-পথ ও গোষ্ঠীকে দমন, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুণগত পরিবর্তনের এক সন্ধিক্ষণে দ্য মিরর এশিয়া আত্মপ্রকাশ ঘটায়।
দাবি করা হয়েছে, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে বঞ্চিতদের অধিকারের কথা তুলে আনা আর ক্ষমতাবানদের জবাবদিহি নিশ্চিতই তাদের লক্ষ্য।
অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম হিসেবে শুরু করা দ্য মিরর এশিয়া দেশে দেশে শ্রেণি, বয়স, লিঙ্গ, সম্প্রদায় ও মত-নির্বিশেষে সবার তথ্য ও মতামত তুলে ধরতে চেয়েছে। উদারনীতি ও অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি দায়বদ্ধতাও রয়েছে তার। নারী, শিশু, ধর্মীয় সম্প্রদায় বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আত্মমর্যাদার প্রতিও এ সংবাদমাধ্যম সংবেদনশীল। বিশ্বজুড়ে জনস্বার্থের সংবাদকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে দ্য মিরর এশিয়া।
মিরর এশিয়ার সম্পাদক কে?
সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে এর সম্পাদক হিসেবে নাম রয়েছে মারুফ মল্লিকের।
মাইক্রোসফটের অধীনস্থ সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট লিংকডইন-এর প্রোফাইলে মারুফ মল্লিকের পরিচয় দেয়া রয়েছে ডয়চে ভেলে একাডেমির লেকচারার হিসেবে। এটি মূলত জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের মিডিয়া উন্নয়ন, মিডিয়া পরামর্শ এবং সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণের আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে মারুফ মল্লিকের।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও তার মতামতধর্মী লেখা দেখা গেছে। তবে “আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি বেশি ‘বিস্ময়’ দেখিয়েছে”, ‘বিএনপি করা কি বেআইনি কাজ’, ‘জিয়ার মধ্যবাম ধারার উন্নয়ননীতি’- এমন নানা শিরোনামে মতামত লিখেছেন তিনি, এর ফলে প্রশ্ন উঠছে মারুফ মল্লিক বিএনপির হয়ে কাজ করছেন কিনা।
তবে এই মারুফ মল্লিকই দ্য মিরর এশিয়ার সম্পাদক কিনা, তাদের ওয়েবসাইটে কোনো ছবি না থাকায়; বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে, সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা প্রতিনিধি সাঈদ খানকে। কাফরুল থানায় করা মেট্রোরেল স্টেশনে ভাঙচুরের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।