দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
সরকারি ব্যাখ্যা ভুল দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাবে শিক্ষকেরা
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্ত্যাহারের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, কর্মসূচিটি নিয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে, তা ভুল।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক কর্মবিরতি ১ জুলাই শুরু হয়। ওই দিনই প্রত্যয় কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
শিক্ষকদের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই আন্দোলন অযৌক্তিক। তিনি এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। ওদিকে মঙ্গলবারই জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্মসূচিটির বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে।
‘প্রত্যয় সম্পর্কে কিছু বিষয়ে অধিকতর স্পষ্টীকরণ’ শিরোনামের ব্যাখ্যায় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরিরত, তাঁরা আগের মতোই পেনশন-সুবিধা পাবেন। নতুনদের ক্ষেত্রে প্রত্যয় চালু হবে। নতুন কর্মসূচিতে আনুতোষিক, অবসরের বয়স ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকায় পড়লাম এবং টেলিভিশনেও দেখলাম, পেনশন কর্তৃপক্ষের একভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য বুধবার ফেডারেশনের একটি বৈঠক আয়োজন হতে পারে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম আলোর প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবারও ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, সব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সঙ্গে রয়েছে। তবে ৩৫টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ক্লাস হয়। সেগুলোতেই কর্মবিরতির কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
কর্মবিরতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছেন না, পরীক্ষা বন্ধ। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও কর্মবিরতিতে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যত অচল।
শিক্ষকদের দাবি তিনটি হলো: ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে (জ্যেষ্ঠ সচিবরা যে ধাপে বেতন পান) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো প্রবর্তন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বলেন, আগামী প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য এই আন্দোলন। অকস্মাৎ কেন একটি বৈষম্যমূলক কর্মসূচি শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকসমাজ কখনোই এটি গ্রহণ করবে না। এই আন্দোলন আমাদের উত্তরসূরি নতুন প্রজন্মের জন্য।’
শিক্ষক সমিতির কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক লুৎফর রহমানও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘যদি সরকার কালক্ষেপণ করে, আন্দোলনে দেশের মানুষও অংশ নেবে। আমাদের শিক্ষকদের আদর্শের ভিন্নতা থাকলেও এই আন্দোলনে কোনো আদর্শের ভিন্নতা নেই। এটি আমাদের বাঁচা-মরার আন্দোলন। এতে আমাদের জিততেই হবে।’
একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদও মঙ্গলবার কর্মবিরতি পালন করে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কর্মবিরতির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পাশেই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মমিন উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো বার্তা আসেনি। তাঁরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চান। দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে চান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষকেরাও সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। মঙ্গলবার এক অবস্থান কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক সরকার বলেন, ‘আমরা তিন মাস ধরে ছোট ছোট কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ে জানানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের এসব কর্মসূচি নাকি তাঁরা জানেনই না।’