দেশজুড়েভ্রমন

মন ভালো করার আরেক নাম বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত

মুজতাহিদ হাসান: নগরজীবনের ব্যস্ততার মাঝে মন চায় একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে। তাই তো আপনার একঘেয়েমি ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত থেকে। যার উত্তরে শঙ্খ নদী, দক্ষিণে চকরিয়া-পেকুয়া, পূর্বে পাহাড় এবং পশ্চিম সীমান্ত বঙ্গোপসাগর সীমারেখায় অবস্থিত। এই সমুদ্র সৈকত তার মনোরম পরিবেশ, মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকদের আকর্ষণ করে আসছে। বঙ্গোপসাগরের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়া এই বিশাল বালুতট তার অপরূপ সৌন্দর্য, নির্জন পরিবেশ এবং মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়।

বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম বিভাগের বাঁশখালী উপজেলায় অবস্থিত। সমুদ্র সৈকতটি বাহারছড়া নামেও পরিচিত। এর দুটি প্রধান পয়েন্ট রয়েছে, একটি কদমরসুল পয়েন্ট এবং অন্যটি খানখানাবাদ পয়েন্ট। সৈকতটির দৈর্ঘ্য ৩৭ কিলোমিটার। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত বা বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত।

এই সৈকতটি বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, গন্ডামারা, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে এই সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। সমুদ্র সৈকতের পুরো পশ্চিম দিকটি কুতুবদিয়া চ্যানেল এবং কুতুবদিয়া দ্বীপটিও এর কাছাকাছি। বাঁশখালীর গুনাগরী বাজার থেকে সরাসরি এই সৈকতে পৌঁছানো যায়। ৪৫০ বছরের পুরনো বকশী হামিদ মসজিদটিও এই সমুদ্র থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

সাগর পাড়ের বালুকা রাশি, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ মন ভরিয়ে দেবে আপনার। দেখা পাবেন নানা বয়সী মানুষ কতই না আনন্দ করছে সেখানে। সৈকতের সোনালী বালি, নীল সমুদ্রের অবিশ্রান্ত তরঙ্গ, দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ, ঝাউবনের সারিবদ্ধ সব মিলিয়ে এক অপূর্ব দৃশ্য। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অসাধারণ দৃশ্য এই সৈকতকে করে তোলে আরও মনোমুগ্ধকর।

বাঁশখালির এ সৈকতটি প্রায়ই মুখর থাকে গাঙচিলের আনাগোনায়। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ঝাউবন হাতছানি দিয়ে ডাকে প্রকৃতিপ্রেমীদের। তারা জানান, বসার সিট থাকলে আর একটু সুন্দর লাগতো। কেউ কেউ আবার সিকিউরিটি বাড়ানোর কথাও বললেন।

মূলত স্থানীয়রাই এই সৈকতে বেড়াতে আসেন। খুব একটা পা পড়ে না দূরপাল্লার লোকজনের। কেননা, মূল সড়ক থেকে কয়েকটি পথে সেখানে যাবার সুযোগ থাকলেও এখনো অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। গড়ে ওঠেনি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা। স্থানীয়রা জানান, অনেক পর্যটক আসতো রাস্তাঘাট যদি আর একটু ভালো থাকতো।

স্থানীয়দের আক্ষেপ, সঠিক প্রচার প্রচারণার অভাবে সৈকতটি কিছুটা দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিলে এটিও কক্সবাজারের মতো পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে বলে মনে করছেন আগত পর্যটকরা।

স্থানীয়রা জানান, জাতীয় দিবস, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাঁশখালীর উপকূলীয় সমুদ্র সৈকতে হাজারো লোকের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। এ সৈকতের ৭ পয়েন্টে দেখা মেলে হাজার হাজার পর্যটকের। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায়, এখানে ভালো মানের আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরা তড়িঘড়ি করে উপজেলা সদর কিংবা নিজ বাসস্থানে চলে যান। পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে সরকার যেমন লাভবান হবে, তেমনি বিনোদনপ্রেমী পর্যটকেরা আনন্দভ্রমণের জন্য খুঁজে পাবে নতুন ঠিকানা।

এখানে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে সন্ধ্যার পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে সূর্যাস্তের দৃশ্য যেকোন মানুষের মনকে অনেক বেশি পুলকিত করে। সুতরাং সৈকতে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারেন।

সাগরের গর্জন মন ভালো করে দেয়। এর আদিগন্ত জলরাশি দেখে বারবার বিমোহিত হয় ভ্রমণপিপাসুরা। এজন্য সবার সমুদ্রে দর্শনে যাওয়া উচিত। বিশেষ করে যাদের ঘনঘন মন খারাপের স্বভাব আছে তাদের। একা একা সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন, আর নিজের সব দুঃখ, কষ্ট সমুদ্রের সঙ্গে শেয়ার করবেন। দেখবেন, মন হালকা হয়ে যাবে।

লেখকঃ মুজতাহিদ হাসান
শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ
পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

/এএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close