ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: আরও ৬টি ব্যাংকের কাছে ডলারে অতিরিক্ত মুনাফা করার ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল ব্যাংকগুলোর এমডিকে চিঠি দিয়ে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- বিদেশি মালিকানার এইচএসবিসি, বেসরকারি খাতের এনসিসি, মার্কেন্টাইল, ব্যাংক এশিয়া, ইউসিবি ও ঢাকা ব্যাংক। ডলার বাজারে সাম্প্রতিক অস্থিরতার মধ্যে এ নিয়ে ১৩ ব্যাংকের কাছে এ ধরনের ব্যাখ্যা চাওয়া হলো। এ ছাড়া ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে দায়িত্ব থেকে সরানো এবং এসব ব্যাংকের এমডিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
এদিকে ডলারের কিছুটা কমে আসা দরও আবার বাড়ছে। সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রির পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। এ পরিস্থিতির মধ্যে আজ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার সঙ্গে বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে দেখা গেছে, কোনো কোনো ব্যাংক ২০২১ সালের প্রথম ৬ মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে দ্বিগুণ বা তার বেশি মুনাফা করেছে। অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে এ ধরনের মুনাফা করায় ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অবশ্য একটি ব্যাংক ডলার বেচাকেনায় কেমন মুনাফা করবে, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ডলারে বেশি মুনাফা করায় ৬টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত ৮ আগস্ট বিদেশি মালিকানার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, বেসরকারি ব্র্যাক, দি সিটি, সাউথইস্ট, ডাচ্-বাংলা ও প্রাইম ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁরা বর্তমানে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে মানবসম্পদ বিভাগে সংযুক্ত। পরে গত ১৮ আগস্ট ব্যাংকগুলোর এমডিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব ব্যাংকের ডলার থেকে অর্জিত মুনাফা আলাদা একটি অ্যাকাউন্টে রাখতে বলা হয়েছে। পরে গত ২৪ আগস্ট ডলারের দরের প্রকৃত তথ্য আড়াল করায় ইস্টার্ন ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার তালিকায় থাকা একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ব্যক্তি পর্যায়ের মেয়াদি আমানতে মূল্যস্ম্ফীতির চেয়ে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। মূল্যস্ম্ফীতি বাড়লেও ঋণে ৯ শতাংশের বেশি সুদ নিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এতে এখন ব্যাংকগুলোর মুনাফা অর্জনের জন্য কমিশন, সার্ভিস চার্জ বা ডলারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ডলার বেচাকেনায় একটি ব্যাংকের মুনাফা কেমন হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই।
গতকাল ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন থেকে প্রতি ডলার ১১০ টাকা ৭৫ পয়সা দরে কিনেছে ব্যাংকগুলো। অন্য মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি থেকে কিনতে আরও বেশি খরচ করতে হচ্ছে। ফলে এখন আবার কোনো কোনো ব্যাংক আমদানি দায় নিষ্পত্তিতে ১১১ টাকা পর্যন্ত দর নিচ্ছে। অবশ্য রপ্তানি বিল ভাঙাচ্ছে ১০০ টাকার আশপাশের দরে। তবে যে ব্যাংকের রপ্তানি বিল সেই ব্যাংকেই ভাঙাতে হচ্ছে। এতে রপ্তানি আয় কম থাকা ব্যাংকগুলোর আমদানি দায় রেমিট্যান্সের ওপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে। আর রপ্তানি আয় বেশি থাকা ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে ১০৪ থেকে ১০৬ টাকা দরে।
বাজারে স্থিতিশীলতা রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিনই ডলার বিক্রি করছে। গতকাল কয়েকটি ব্যাংকের কাছে আরও ৫ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াল ২৬৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গতকাল দিন শেষে ৩৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। শিগগিরই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১৭৩ কোটি ডলার দায় পরিশোধ করতে হবে। এ অর্থ সমন্বয় হলে রিজার্ভ অনেক কমবে।
ব্যাংকের এমডিদের নিয়ে আজ বৈঠক :চলমান ডলার সংকটের মধ্যে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার আবার বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের সভাপতিত্বে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গত ১৪ আগস্ট গভর্নরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ডলার কেনা ও বেচার মধ্যে ১ টাকা পার্থক্যের সিদ্ধান্ত মেনে চলার বিষয়ে আলোচনা হয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তা মানছে না। এসব নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।