দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
ব্যয় সংকোচনে নতুন ৮ সিদ্ধান্ত সরকারের
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক:নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চলমান বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ব্যয় সংকোচন নীতি বেছে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে নতুন করে আটটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি সব দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনাসহ জ্বালানি খাতে বাজেটে বরাদ্দের ২০ শতাংশ কম ব্যবহারের মতো সিদ্ধান্ত।
গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ে কার্যকর কর্মপন্থা নিরূপণে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবরা। পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এ বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আটটি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এগুলো হলো সরকারের সব দপ্তরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নেবে। সরকারি দপ্তরগুলোতে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমাতে হবে। এছাড়া জ্বালানি খাতের বাজেট বরাদ্দের ২০ শতাংশ কম ব্যবহারের লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করবে। অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা তেল ব্যবহার করেন, এখন তাদের বরাদ্দ ২০ শতাংশ কম হবে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, অনিবার্য না হলে শারীরিক উপস্থিতিতে সভা পরিহার এবং অধিকাংশ সভা অনলাইনে আয়োজন করতে হবে। এছাড়া অত্যাবশ্যক না হলে বিদেশ ভ্রমণ যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে বাজার মনিটরিংয়ের ওপর জোর দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় গতকালের বৈঠকে। সে অনুযায়ী খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে বাজার মনিটরিং, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুদদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ অন্যান্য পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী পরিবহনে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার যৌক্তিকীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বৃদ্ধির জন্য অর্থবছরের শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব ক্রয় পরিকল্পনা পুনঃপর্যালোচনা করে রাজস্ব ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ নেবে।
বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে। আসলে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভবিষ্যতে যাতে আমাদের কোনো সংকটে পড়তে না হয়, সেজন্য এখন থেকেই সংযমী হতে হবে। সে উদ্যোগই নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, নতুন এ সিদ্ধান্তের কারণে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে আমাদের অবস্থা খারাপ। কিন্তু আমরা দেখছি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মন্দা দেখা দিয়েছে, খাদ্য-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা যেন এ ধরনের সমস্যায় না পড়ি তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে।
বৈঠকে কভিড মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয়-সাশ্রয় নীতি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এ সময় ড. আহমদ কায়কাউস রাজস্ব ব্যয় সংকোচন, উন্নয়ন ব্যয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সচিবদের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বানের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। মন্ত্রণালয়গুলোকে অনাবশ্যক ব্যয় পরিহারসহ সবক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাসের নির্দেশনা দেন তিনি।
এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এছাড়া খরচ সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়।
সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, খরচ কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। বিশ্ব পরিস্থিতির উত্তরণ হলে আগের অবস্থানে ফিরে আসা হবে। তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি এক-দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হতে পারে। এতে দিনে এক-দেড় ঘণ্টা এবং কোনো কোনো জায়গায় ২ ঘণ্টাও লোডশেডিং হতে পারে। কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এবং পৃথিবীর এ দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
একই বৈঠক শেষে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কোন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হবে, তা আগে থেকে গ্রাহককে জানিয়ে দেয়া হবে। আগামী এক সপ্তাহে ১-২ ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হবে। পরে পরিস্থিতি বুঝে ভিন্ন রকম সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।