আশুলিয়াদেশজুড়েপ্রধান শিরোনামসাভারস্থানীয় সংবাদ
৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম: আসামিকে গ্রেফতারসহ ৬ দফা দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্রের অতর্কিত হামলা ও আঘাতে মারা যাওয়া শিক্ষক উৎপলের হত্যাকান্ডের পর অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে উত্তাল এখন সাভার-আশুলিয়া। এ দাবিতে সাভার উপজেলার শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ও আশুলিয়ার জামগড়ার চিত্রশাইল এলাকায় পৃথক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) আশুলিয়ায় বেলা ১১টার দিকে কর্মসূচি পালন করেন হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবং ১২ টার দিকে সাভারের উপজেলা শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মানববন্ধন করে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ।
নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার এলংজানি দত্তপাড়া গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি ২০১৩ সালে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী কলেজে কলেজ শাখার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
অভিযুক্ত বখাটে ওই স্কুলের ছাত্র চিত্রশালাই এলাকার উজ্জ্বল হাজীর ছেলে ও একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মালিক হাজী হযরত আলীর ভাগিনার ছেলে ওই ছাত্র। ঘটনার পর ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যায় সে। তার বাসায় গিয়েও বাবা-মাসহ কাউকে পাওয়া যায়নি।
সাভারে মানববন্ধনে সাভার উপজেলা কিন্ডারগার্টেন ফেডারেশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা চাই সরকার এ হত্যাকান্ডের কঠোর ব্যবস্থা নিবে, নাহলে আমরা দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।
সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন পিটার গমেজ বলেন, বখাটে ওই ছাত্রকে আমরা কুলাঙ্গার হিসেবে আখ্যায়িত করি। তার স্ট্যাম্পের আঘাতে শিক্ষক উৎপলের মৃত্যু হয়েছে। একটা ছেলে বা মেয়ের পক্ষে কোনদিনও একজন শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে পারেনা।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলম সাজু প্রমুখ।
এদিকে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী কলেজের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে ৬ দফা দাবি তোলা হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সারা দিন এই কর্মসূচি পালন করব। স্থানীয় অন্যান্য স্কুল এবং কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তাদের আমাদের সঙ্গে সামিল করব। যতক্ষণ পর্যন্ত ন্যায় বিচার এবং দাবি পূরণ না হবে ততক্ষণ আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
তাদের দাবিগুলো হলো- অনতি বিলম্বে ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে হবে, হত্যাকারীর সঙ্গে থাকা অজ্ঞাতনামা আসামিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে, হত্যাকারীর বাবা ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে হবে, নিহতের পরিবারকে সর্বোচ্চ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ভেদাভেদ নির্মূলে সাধারণ সর্বজনীন আইন প্রণয়ন করতে হবে, পুরো এলাকা থেকে কিশোর গ্যাং মুছে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিক্ষোভ মিছিলকে বেগবান করতে হবে।
এদিকে মানববন্ধনে হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গেল শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে ওই শিক্ষকের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণীর এক ছাত্র। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার ভোরে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার মারা যান। রবিবার (২৬ জুন) আশুলিয়া থানায় নিহত শিক্ষকের ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকে এখনও পলাতক ওই ছাত্র।
/এএস