প্রধান শিরোনামব্যাংক-বীমা
শৃঙ্খলা আসছে বীমা খাতে
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: বীমা খাতে গ্রাহক ঠকানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়। অটোমেশন, প্রযুক্তিগত অবকাঠামো, স্বচ্ছ জবাবদিহিতা এবং গ্রাহক পর্যায়ে বীমাকারী ও কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ না থাকায় প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়তে হতো গ্রাহককে। লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কর্তৃক শতকোটি টাকার বীমাদাবি পরিশোধ না করার প্রমাণও উঠে এসেছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে। বীমা খাতে শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছে ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফর্ম (ইউএমপি)।
জানা গেছে, গ্রাহক সুরক্ষা বাড়াতে জাতীয় বীমা নীতি-২০১৪-এ ‘ইলেকট্রনিক ডাটা ও তথ্যের বিনিময় চালুকরণ’ সম্পর্কে বলা হয়। এ ধারাবাহিকতায় যাত্রা করে ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফর্ম (ইউএমপি)। ডিজিটাল প্লাটফর্মটি তৈরির উদ্দেশ্য ছিল সব বীমাকারীর পলিসিসংক্রান্ত নির্ভুল তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা। প্লাটফর্মটি বর্তমানে বীমা খাতের ব্যাকবোন হিসেবে কাজ করছে এবং এর সুফল সর্বস্তরে প্রতিফলিত হচ্ছে।
২০১৯ সালের প্রথমদিকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ), বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ), লাইফ ও নন-লাইফ বীমাকারীর নির্বাহী প্রধানদের সঙ্গে সমন্বয় এবং বিভিন্ন মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভায় আলোচনার পর সর্বসম্মতিতে সিস্টেমের জন্য প্রতি পলিসির বিপরীতে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ৩ টাকা ৫০ পয়সা এবং প্রতি এসএমএসের জন্য ৪০ পয়সা দরে ইউএমপি সার্ভিসটি তার যাত্রা শুরু করে। শুরুর দিকে দেশের সব বীমা প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও একটি অভিন্ন কাঠামোয় তথ্য সংরক্ষিত ছিল না। প্রতিটি বীমা প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে বিভিন্ন কাঠামোয় তথ্য সংরক্ষণ করত। এমনও দেখা গেছে, কোনো কোনো বীমা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি কোনো ধরনের তথ্যই সংরক্ষণ করত না। ফলে তথ্যগত কোনো ধরনের ডিজিটাইজেশন বা ডিজিটাল সেবা বাস্তবায়ন অসম্ভব ছিল।
ইউএমপি টিমের সদস্যরা প্রতিটি বীমা প্রতিষ্ঠানের বাস্তবিক প্রেক্ষাপট অনুধাবনের মাধ্যমে অভিন্ন তথ্য কাঠামোর সমন্বয়ে এ খাতে একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেন। বীমা খাতে ডিজিটাল সার্ভিস বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা জনবল নিযুক্তকরণ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল বৃদ্ধি, সব হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক প্রতিস্থাপন ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তায় এনক্রেপশন কিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় আউটসোর্স সাপোর্ট ক্রয় ও নিয়মিত আপডেট গ্রহণ, ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৮১টি পৃথক সফটওয়্যার তৈরি ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নতি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যুক্ত ও নিয়মিত চাহিদা নিরূপণ, বিজনেস ইন্টেলিজেন্স যুক্ত, কিউআর কোড এমবেডেড ব্যবস্থা চালু, প্রয়োজনীয় মডিউল তৈরি ও নিয়মিত আপডেটসহ রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ইউএমপিতে চলমান ডিজিটাল সার্ভিসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সেবার বিবরণ বণিক বার্তার পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো—
ডিজিটাল পলিসি রিপজেটরি: বীমা খাতের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নে বীমা শিল্পের সঠিক তথ্য জানাতে দেশের সব বীমা প্রতিষ্ঠানের বীমা গ্রাহকের পলিসি ও প্রিমিয়ামসংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে কর্তৃপক্ষের ইউএমপিতে সংগ্রহ ও সংরক্ষিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মোট ২২ লাখ ৮২ হাজার ৩৮৫টি বীমা পলিসির ৭৫ কোটি ৮ লাখ ১ হাজার ৯০টি ডাটা সংরক্ষিত হয়েছে।
ই-রিসিপ্ট: বীমা গ্রাহক কর্তৃক ?জমাকৃত প্রিমিয়ামের বিপরীতে ইউএমপি থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ই-রিসিপ্ট প্রস্তুত হচ্ছে এবং বীমা গ্রাহক পর্যায়ে ডিজিটালি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও ডাক ও কুরিয়ার বাবদ বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর পলিসিপ্রতি কমপক্ষে ২০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এখন পযন্ত ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠানের বীমা গ্রাহককে ২ কোটি ২ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০টি ই-রিসিপ্ট ডিজিটালি সরবরাহ করা হয়েছে।
ই-কেওয়াইসি: বীমা গ্রাহকের পরিচয় যাচাই, জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখিত সঠিক নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে পলিসি ডকুমেন্টে আনা এবং বীমা গ্রাহককে ট্র্যাক করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এপিআই কানেক্টিভিটি স্থাপন করে ই-কেওয়াইসি সেবা চালু করা হয়েছে। ফলে গ্রাহক যাচাইসহ মেয়াদান্তে বীমা দাবি পরিশোধে গ্রাহক হয়রানি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ই-কেওয়াইসি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর এককালীন খরচ বাবদ আনুমানিক ৪৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, বার্ষিক নিয়মিত চলমান খরচ বাবদ ৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং প্রতিবার তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাবদ ১ টাকা খরচ সাশ্রয় হচ্ছে।
ইউএমপির ডিজিটাল সার্ভিসগুলো বাস্তবায়নের ফলে বীমা খাতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রীয়ভাবে ই-রিসিপ্ট প্রদানের ফলে প্রিমিয়ামসংক্রান্ত সব লেনদেনের তথ্য আইডিআরএর কাছে সংরক্ষিত থাকায় অনৈতিক কার্যকলাপ অনেকাংশেই হ্রাস পাচ্ছে।