দেশজুড়েপ্রধান শিরোনামস্বাস্থ্য
বান্দরবানের দুই ইউনিয়নে ডায়রিয়ায় মৃত্যু ১০
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি ও আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের গহীনে দুর্গম কয়েকটি পাড়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে পাড়াগুলোয় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে একজন শিশু ও কারবারিসহ (পাড়া প্রধান) বুধবার পর্যন্ত মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে এক বছরে জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৬০ শতাংশ।
কুরুকপাতা ইউনিয়নের দুর্গম পাড়াগুলোয় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে দেউলাপাড়ায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগ দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। ফলে ৬ নং ওয়ার্ডের কুরুকপাতা বাজার, ৭ নং ওয়ার্ডের বুসি দেউলাপাড়া, লেলং কারবারিপাড়া, বোতু কারবারিপাড়াসহ আরো কয়েকটি পাড়ায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা বণিক বার্তাকে বলেন, ৮-১১ জুন পর্যন্ত রেমাক্রি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে ১২ বছরের এক শিশুসহ মেনথাং পাড়ার কারবারিসহ (পাড়া প্রধান) চারজনের মৃত্যু হয়।
উপজেলার প্রায় সব পাড়ায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। মানুষের স্বাস্থ্যাভ্যাসগত কারণে বর্তমান সময়ে ডায়রিয়া হলেও শঙ্কার কিছু নেই বলে জানান আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহতাব চৌধুরী। তিনি বলেন, দুর্গম এলাকার পাড়াগুলোয় রোগীদের চিকিৎসা সেবা ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন, ডায়রিয়ার ওষুধসহ স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। যাতে ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে প্রারম্ভিকভাবে স্যালাইন ও ওষুধ সংকটে না পড়ে। একই সঙ্গে দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনীর চিকিৎসা ক্যাম্প থেকে ওখানকার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
গতকাল বুধবার পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রেমাক্রি ইউনিয়নে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, দুর্গম এলাকা হওয়ায় দু-তিনদিন পর পর তথ্য পাওয়া যায়। গতকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ওই ওয়ার্ডে রোগী কমে বর্তমানে প্রায় ৪০ জন রয়েছে। তাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিজিবির সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত।
এদিকে এক বছরে জেলায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের বাস্তবায়ন সহযোগী সংস্থা ব্র্যাক। সূত্র জানায়, গত বছরের জুনে জেলায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৫১২। সব শেষ ১১ জুন পর্যন্ত জেলায় ৮৩০ জন ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৯ জন, রোয়াংছড়িতে ৩৬, রুমায় ২৪, নাইক্ষ্যংছড়িতে ১২, থানচিতে ১৪৭, আলীকদমে ২৮১ ও লামায় ৩০১ জন। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির বান্দরবান জেলা সমন্বয়কারী মো. আরিফ। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা পেয়ে ১১ জুন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ করা হয়েছে।
ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আন্ধার মানিক এলাকায় ফিল্ড হসপিটাল ও ম্যালেরিয়া রোধে সব উপজেলায় কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ১১টা পর্যন্ত জেলায় মোট ৫০ জন ডায়রিয়া রোগী পাওযা গেছে। এর মধ্যে ২৫ জন বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিচ্ছে ও ২৫ জন যার যার বাসস্থানে থেকে চিকিৎসাধীন। ফিল্ড হসপিটালের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে দুজন মেডিকেল অফিসারসহ মেডিকেল টিম বৃহস্পতিবার সকালে আন্ধার মানিকের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। শুক্রবার ফিল্ড হসপিটালের কার্যক্রম শুরু হবে। নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী ও বিজিবি সহায়তা করছে।
/একে