আশুলিয়াপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ

বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের সন্ধান

আব্দুল কাইয়ুম, নিজস্ব প্রতিবেদক: আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় দুই দিন পর ভুক্তভোগীর সন্ধান মিলেছে। তাদের একজন কপালে আঘাত পেয়েছেন। কপালে দুইটি সেলাই করতে হয়েছে। আরেকজনের ডান পায়ের গোড়ালি ভেঙে গেছে।আরেকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকের মতো তারা জীবন বাঁচাতে ওই সময় চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে সড়কে।

সোমবার(১৬মে)রাত সোয়া ১০টার দিকে আশুলিয়ার নবীনগরে। সে সময় চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের চেষ্টায় একজন সন্দেহভাজন ছিনতাইকারী নাজমুল মিয়া গণধোলাইয়ের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় একদিন পর মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

এদিকে এই ঘটনায় ছিনতাইকারীকে আটককারী সাভার ট্রাফিক বিভাগের এস আই হেলাল উদ্দিন মঙ্গলবার (১৭ মে) রাতে বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৩ থেকে ৪ জনকে আসামি করে দস্যুতার মামলা দায়ের করেছেন।

এ ঘটনায় গণধোলাইয়ে সন্দেহভাজন নাজমুল মিয়া নামে এক ছিনতাইকারীর মৃত্যুর ঘটনায়ও আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে বাসে ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় শরীরে কাফনের কাপড় পরিহিত ছিল নিহত নাজমুল মিয়া। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার এস আই শ্যামল।

তবে বুধবার রাতে তিনজন ভুক্তভোগীর খোঁজ মেলে। ইতিমধ্যে পুলিশও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

এস আই শ্যামল বলেন, বুধবার রাত প্রায় ১২টার দিকে আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া থেকে সাভার পরিবহনের সেই বাসটিও জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চালকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র নোমান বিন হারুন বলেন, আমি বাইপাইল থেকে সাভারের দিকে যাচ্ছিলাম। পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার একটু সামনে থেকে মাথায় পাগড়ি ও কোমড়ে কাফনের কাপড় পড়া ছিল নাজমুল মিয়া। নবীনগর মোড় আসতেই ছুরি বের করে চালকের গলায় ধরে বলে গাড়ি টান দে। পরে বাসের গেটে থাকা এক নারীকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এসময় বাসের হেলপারও পড়ে যায়। দেখে মনে হচ্ছিল যুবক নেশাগ্রস্ত। বাসের জানালা দিয়ে আমি ও তারেক নামে আরো একজন চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে পড়ি। আমার কপালে আঘাত পাই। সাভারের সুপার ক্লিনিকে দুটি সেলাই করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করনেনি কেন? এমন জবাবে বলেন, নিজেই গুরুতর জখম হয়েছি। চিকিৎসা নিচ্ছি। তাই জানানো হয়নি।

মানিকগঞ্জ দৌলতপুরের বাসিন্দা বর্তমানে সাভারের ছায়াবিথীতে বসবাসকারী আরেক ভুক্তভোগী তারেক বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ থেকে সাভারে বাসার উদ্দেশে বাসে উঠেছি। নবীনগর মোড়ে আসা মাত্র বাসে যাত্রীদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পাই। আমি বাসের পেছনের দিকে ছিলাম। পাশের একজন বলে ড্রাইভারের গলায় ছুরি ধরছে। সামনে থাকা যাত্রীরা চিৎকার করছে। চলন্ত বাস থাকলেও একটু ধীরগতি ছিল। কয়েকজনের সঙ্গে জানালা দিয়ে আমিও লাফ দেই। সড়কে পড়ে আমার ডান পায়ের গোড়ালি ভেঙে যায়। কোনোমতে একজনের সহযোগীতায় রিকশা নিয়ে প্রথমে সাভারে সিআরপি হাসপাতালে যাই। সেখান জরুরি চিকিৎসা নাই বলে সাভারের সুপার ক্লিনিকে চিকিৎসা নেই। পরে বাসায় আসি। আমার সঙ্গে নোমান নামে শিক্ষার্থী চিকিৎসা নেন।

তিনি আরো বলেন, ছুরি হাতে একজনকেই দেখতে পেয়েছি। তার সঙ্গে আর কেউ ছিল কিনা তা নিশ্চিত নই। তবে ধারণা তার সঙ্গে আরো কয়েকজন ছিনতাইকারী যাত্রীবেশে ছিল। আমি এখনো চিকিৎসাধীন। পায়ে প্লাস্টার। ফলে পুলিশকে জানানোর সুযোগ পাইনি।

ভুক্তভোগী ও জাবি ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শাফিউজ্জামান, সোমবার রাত ১০টার দিকে নবীনগরে হঠাৎ বাসের চালক গলায় ছুরি ধরে ওই লোক। এসময় বাসের গেটে থাকা এক মহিলা ও হেলপারকে লাথি ফেলে দিল। অবস্থা বেগতিক দেখে জানালা দিয়ে দুই তিনজন লাফ দিল। আমিও বাসের জানালা দিয়ে লাফ দেই। তবে তেমন ক্ষতি হয়নি। আর ছুরি হাতে লোকটা দেখে মনে হচ্ছিল নেশাগ্রস্ত। তবে ওই সময় যাত্রীদের থেকে কোনো কিছু চায়নি।

দুই দিন পর ভুক্তভোগীদের সন্ধানের বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়ার থানার এস আই শ্যামল বলেন, যে কেউ অপরাধের শিকার হলে যত দ্রুত সম্ভব পুলিশকে অবহিত করা। প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে। যাতে পুলিশ তাৎক্ষণিক পুলিশিং সেবাসহ অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
/একে

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close