প্রধান শিরোনামসাভারস্থানীয় সংবাদ
ঢাকার পরিবেশ দূষণ কমাতে গিয়ে তো আমরা সাভারকে দূষিত করতে চাইনি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকার পরিবেশ দূষণ কমাতে গিয়ে ট্যানারীগুলো ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্রান্সফার করা হয়। কিন্তু সাভারকে দূষিত করতে তো আমরা আসিনি। সাভারে যেসকল সুবিধা থাকার কথা ছিল তা এখনো গড়ে উঠেনি বলে মন্তব্য করেন ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সাভারের একটি হোটেলে ‘কোয়ালিশন বিল্ডিং এন্ড এডভোকেসি মিটিং’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। চামড়া শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের অধিকার, স্বাস্থোন্নয়ন সহ চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে বিশেষ প্রস্তাবনা নিয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। বিশেষ এই আলোচনা সভার আয়োজনে সহযোগীতা করে সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশ।
এসময় শ্রমিকদের পক্ষ থেকে মিতালী ট্যানারীর কর্মী ফয়েজ বলেন, বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে এসে আমরা ধলেশ্বরী ধ্বংস করছি। কারখানায় কোন কথা বলতে গেলে, পরিবেশের কথা বলতে গেলে আমাদের চাকরি চলে যায়।
সলিডারিটি সেন্টারের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার অনিন্দিতা ঘোষ বলেন, নগরে যদি আগুন লাগে, মন্দির কিন্তু আর অরক্ষিত থাকেনা। ঠিক তেমনিভাবেই শ্রমিকরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে কিন্তু আঁচ আমাদের গায়েও লাগবে। এ আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক। এসময় সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের মেডিকেল অফিসার ডাঃ উম্মে মাহবুবা উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজনে মূল প্রস্তাবনা পত্র উপস্থাপন করেন সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শিল্পটাকে বাঁচানোর জন্য কি কি করা দরকার আমরা তা করার জন্য সার্বিকভাবে চেষ্টা করছি। শ্রমিকরা আইনগত প্রাপ্য যা পাওয়ার কথা কারখানা থেকে তা পাচ্ছেন না। ধীরে ধীরে বড় কারখানাগুলোও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য সমস্যা ট্যানারী শ্রমিকদের একটি বড় সমস্যা। ট্যানারীগুলো সাভারে ট্রান্সফার করার আগেই এখানে হাসপাতাল হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনো স্থায়ী হাসপাতাল হয়নি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী অত্যন্ত সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখা এবং এই শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে বিরাজমান সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য ১০টি পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ প্রদান করেন আয়োজকরা।
তাদের পরামর্শগুলো হলঃ
১। শ্রম আইনের সকল ধারা বাস্তবায়নে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২। শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩। চামড়া শিল্প নগরীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা।
৪। প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
৫। সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সিইটিপিকে পুরোপুরি কার্যকর করার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তুলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (LWG) এর সনদ অর্জনের পথ অগ্রসর করা।
৬। প্রতিটি কারখানায় সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরী কাঠামো বাস্তবায়ন করা।
৭। শিল্পের স্বার্থে অবিলম্বে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিককে চাকুরীচ্যুত করা বন্ধ করা।
৮। রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স বিহীন বে-আইনী ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করানো বন্ধ করা।
৯। ট্যানারী শিল্পকে আনুষ্ঠানিক সেক্টরের ধারাবাহিকতায় ফিরিয়ে আনা।
১০। ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করা।
ঢাকা অর্থনীতি/এন এইচ