দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
মুক্তিপণ চাওয়ার আগেই ‘খুন’
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ছোট থেকেই ঢাকায় চাচার বাসায় থাকেন নুরুল আমিন। আদর-ভালোবাসার কোনো কমতি নেই সেখানে। পড়ালেখা করেছেন মিরপুর বাঙলা কলেজে। মাস্টার্স শেষ করে অপেক্ষা করছেন ইংল্যান্ডে যাওয়ার। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে সেখানে যাওয়ার কথাও ছিল তাঁর।
গতকাল রোববার এসব কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের চাচা সফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমার জীবন দিলে হলেও আমি নুরুল আমিনকে বাঁচাতে চাইছি। কিন্তু ওঁরা মেরে ফেলে টাকার জন্য ফোন করেছে।’
২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ হন নুরুল আমিন (২৮)। পরে ৪ জানুয়ারি দারুসসালামের জহুরাবাদস্থ বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তাঁর বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হত্যাকারী আরিফুল ইসলামের সঙ্গে নুরুলের পরিচয় ছিল। ওই নূরুল আমিনকে ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে। ৩ জানুয়ারি ১টার দিকে ফোন করে এক কোটি টাকা দাবি করলে, আমি নুরুল আমিনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বলে ও ঘুমিয়ে আছে।’
নিহতের চাচা বলেন, ‘এ ছাড়া প্রশাসনের কাছে যেতে নিষেধ করে, বিকেল ৫টার মধ্যে টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে বিকেলে ফোন দিয়ে বলে, ‘‘পুলিশ-র্যাবের কাছে কেন গেছেন’’-এই বলে হুমকি-ধমকি দিয়ে ফোন কেটে দেয়।’
সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের যৌথ পরিবার। ঢাকায় আমার গ্লাসের দোকান আছে। পরিবারের ছোট ছেলে আমি। নিহত নূরুল আমিন মেজ ভাইয়ের তিন ছেলের মধ্যে মেজ ছিল। গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে।’
রাজধানীর দারুস সালাম, মিরপুর মডেল ও শাহ আলী থানা এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ওই হত্যাকাণ্ডে করা মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম সাইফ। গ্রেপ্তাররা হলেন আরিফুল ইসলাম (৩০), ইমরান হোসেন (২৫) ও ইয়ামিন মোল্লা (২৫)।
ডিবি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে অবসর সময়ে চাচার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসতেন নুরুল। এর মধ্যেই দোকানে কেনাকাটার জন্য আসা আরিফুল ইসলামের নজর পরে তাঁর ওপর।’
সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় গ্রেপ্তার আসামিরা ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত ছিলের। পরে একদিন দারুসসালাম থানা এলাকার জহুরাবাদস্থ আসামি ইমরানের ভাড়া বাসায় সুকৌশলে ডেকে এনে নুরুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে ওই এলাকার বেড়িবাঁধের ঢালে বস্তাবন্দী করে লাশ ফেলে দেন তাঁরা। পরে তাঁরা ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল থেকে তাঁর চাচাকে ফোন করে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।’
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামি আরিফুল ইসলামের ধারণা ছিল নূরুল আমিনকে অপহরণ করতে পারলে বেশ টাকা পাওয়া যাবে। আর টাকা দিতেও প্রস্তুত ছিলেন নিহতের চাচা। তবে কৌশলে বাসায় ডেকে নিয়েই হত্যা করা হয় ভুক্তভোগীকে।’
/এন এইচ