আশুলিয়াদেশজুড়েপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ
আশুলিয়ায় স্ত্রীর যোগাসাজশে স্বামীকে হত্যা, নেপথ্যে পরকীয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক: আশুলিয়ায় নিজ ঘরে ডিস ব্যবসায়ী ইলিম সরকারকে (৪২) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রীসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরোকীয়ার জের ধরে স্ত্রীর যোগসাজশে তাকে হত্যা করা হয় বলে জানা গেছে।
বুধবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের উপ-পরিদর্শক ও তদন্তকারি কর্মকর্তা (এসআই) সালেহ ইমরান।
এর আগে গত ২৮ মার্চ সিনেমা স্টাইলে স্বামী ইলিম সরকারকে হত্যা করেন স্ত্রী ক্যামিলি ও পরকীয়া প্রেমিক পিন্টুসহ তার সহযোগী। পরে পুলিশ ও পরিবারের সদস্যকে বিভ্রান্ত করতে কন্নায় ভেঙে পরেন তিনি। পরে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেন ক্যামেলি সুলতানা।
নিহত ইলিম সরকার আশুলিয়ার কাঠগড়া সরকারবাড়ি এলাকার হাজী ফজল সরকারের ছোট ছেলে। তিনি প্রায় ৫ বছর ধরে নেট ও ডিসের ব্যবসা করছিলেন। তার ১০ বছর বয়সের ছেলে কাইফ ও ৭ বছরের কাশফিয়া নামের একজন কন্যা সন্তান রয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন- নাটোর জেলার গুরুদাশপুর থানার তেলটুপি গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে মোহাম্মদ রবিউল করিম পিন্টু (৩৫)। তিনি জামগড়া পল্লিবিদ্যুৎ জোনাল অফিসের লাইনম্যান ছিলেন ও আশুলিয়ার জামগড়ার বেরন এলাকায় বসবাস করতেন। এছাড়া ইলিম সরকারের স্ত্রী ও কালু মিয়ার মেয়ে ক্যামিলি সুলতানাকে গ্রেফতার করা হয়। এঘটনায় আরও একজন পলাতক রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যামিলি সুলতানা তার নানার বাড়ি কাঠগড়া থেকে লেখাপড়া করার সুবাদে ইলিম সরকারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৪ বছর আগে বিয়ের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্কের ইতি টানেন ইলিম সরকার। এর পর থেকে তাদের সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত হতে থাকে। কিন্তু ক্যামিলি সুলতানা হঠাৎ পরকীয়ার জালে আটকা পরেন। ২০১৯ সাল থেকে পিন্টুর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হন ক্যামিলি সুলতানা। পরে পরকীয়া সম্পর্কের পথের কাটা তার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৮ মার্চ সকালে ঘুমের মধ্যেই ইলিম সরকারের কুপিয়ে হত্যা করেন স্ত্রী ক্যামেলি সুলতানা, পরকীয়া প্রেমিকসহ সহযোগীরা। এর আগে দুই জন ভাড়াটে খুনিকে ভুক্তভোগীর বাসায় ভাড়া থাকার ব্যবস্থা করে দেয় পিন্টু। তবে ভাড়াটে খুনীরা ব্যর্থ হয়।
পিবিআই জানায়, ইলিম সরকারের বাসায় বিদ্যুতের মিটার লাগানোর কাজ করতে এসে ক্যামির সাথে ২০১৯ সালে পরিচয় হয় পিন্টুর। এর পর তাদের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি ইলিম সরকার জানতে পারলে তাদের মধ্যে মারাত্মক দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনা ইলিম সরকার তার স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের জানাবেন বলে হুমকি দেন। পরি হত্যা কান্ডের প্রায় ৭ দিন আগে ইলিম সরকারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ক্যামিলি ও পরকীয়া প্রেমিক পিন্টু। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতে ক্যামিলি তার স্বামী ইলিম সরকারকে দই মিষ্টির সাথে ঘুমের ওষুধ গুড়ো করে মিশিয়ে খাইয়ে দেয়। পরে সকালে পিন্টুসহ তার সহযোগী ঘরে ঢুকে ইলিম সরকারকে হত্যা করেন। এসময় ক্যামিলি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন। সকাল ৮ টার মধ্যে সবাই গার্মেন্টস কারখানায় কাজে গেলে মানুষ শুণ্য হয় এলাকা। তাই এসময়ই বেঁছে নেয় তারা। হত্যাকান্ড ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য ডিস ব্যবসার কোন্দলের বিষয়টি প্রচার করেন স্ত্রী ক্যামিলি।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালেহ ইমরান বলেন, এ ঘটনায় পিন্টুর সহযোগীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারের আগে তার নাম পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ ঘরে ঢুকে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যায় হত্যাকারিরা। এদিন সকালে তার রক্তাক্ত মরদেহ দেখে হত্যাকারী তার স্ত্রী চিৎকার করে কান্নাকাটি করেন। পরে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেন তিনি।
/ আর এইচ এস