দেশজুড়ে
পুলিশকে তিনবার ফিরিয়ে দিয়েছেন মিন্নি
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বরগুনায় প্রকাশ্যে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির কাছে গিয়েছে পুলিশ। তবে তিনি পুলিশের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেও এখন পর্যন্ত মামলা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি মিন্নি।
সূত্র জানায়, শনিবার (২৯ জুন) এ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হুমায়ুন কবির মিন্নির সঙ্গে ঘটনার বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলাপ করতে রিফাতের বাড়িতে যান (শ্বশুরবাড়ি) যান। সেখানে মিন্নি উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ বোধ করায় তিনি পুলিশের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মিন্নিকে কথা বলার জন্য চাপ দেয়নি পুলিশ। দ্বিতীয় দফায় রিফাতের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে তিনি (মিন্নি) নিজের বাবার বাসায় চলে গেছে।
শনিবার বিকেলে মিন্নির বাবার বাড়িতে যায় পুলিশ। প্রথমবার সেখানে গেলে অসুস্থতার কথা বলে তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেননি। তৃতীয়বার গেলেও কোনো কথা বলেননি তিনি। বাড়ির ভেতর থেকে নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন তিনি। এরপর আর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা করেনি পুলিশ। এদিকে শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনায় গ্রেফতার ৩ জনকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। শনিবার দিনভর তাদের জিজ্ঞসাবাদ করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, হত্যার ঘটনার তদন্ত চলছে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে। তদন্তের পরই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও জড়িতদের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে পুলিশ। আসামিরা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট সকল বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌ-বন্দর সমূহকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে জেলা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, সিআইডি, র্যাব ও ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট কাজ করছে। আশা করছি, সব আসামিকে শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। অভিযুক্তদের বিষয়ে কোনো তথ্য থাকলে তা পুলিশকে জানাতে সবার প্রতি অনুরোধ রইলো।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় শাহনেওয়াজ রিফাতকে। তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের প্রাণপণ বাধা দিয়েও স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি। গুরুতর অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাতের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পরদিন রিফাতের স্ত্রী মিন্নি ও তার সাবেক বন্ধু সাব্বির হোসেন নয়নকে (নয়ন বন্ড) নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিতে থাকে। অনেকে হত্যাকাণ্ডের জন্য মিন্নিকে দায়ী করছেন।
মিন্নি নিজেকে রিফাতের প্রথম স্ত্রী বললেও অভিযুক্ত নয়ন বন্ডের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল বলে কাছে দাবি করেছে কাজী মো. আনিসুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি বরগুনা পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্টার করেন।
কাজী দাবি করেন, নয়ন বন্ড ও আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ের প্রথম সাক্ষী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় আসামি বাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজি। গত বছরের ১৫ অক্টোবর আসরের নামাজের পর তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের দেনমোহর হয়েছিল ৫ লাখ টাকা। তবে দেনমোহরের কোনো নগদ পরিশোধ ছিল না।
এদিকে শুক্রবার থেকে মিন্নির শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, মিন্নির নিরাপত্তার জন্য তার বাড়ির বাইরে পুলিশ রাখা হয়েছে।