আশুলিয়াপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ
অবশেষে আশুলিয়ায় সেই রহস্যময় ভুমিদূস্য মতিনের বিরুদ্ধে মামলা
আব্দুল কাইয়ুম, নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই ছেলের জন্য খেলার স্টেডিয়াম বানাবেন। তাই নিজের বাগান বাড়ির প্রাচীরের বাইরে আশেপাশের প্রায় ২০ টি পরিবারের বসত বাড়ি দখল করে নিচ্ছেন রহস্যময় ভূমিদূস্য এম এ মতিন। তার বর্তমানে বসবাস আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকায়। তার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় অন্তত ১৫ টি লিখিত অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি রয়েছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আশুলিয়ার বাসুন্ধরা আবাসিক এলাকার শেষ দিকে উচ্চ প্রাচীর ঘেরা একটি বাগান বাড়ি। চারাপাশে ঘিরে সিসি ক্যামরা। প্রায় সবই বাইরে দিকে তাক করানো বা প্রতিবেশির বসত বাড়ির দিকে।
প্রথমে দেখা প্রবাসী আলী আজম নামে এক ব্যক্তি সাথে। তার অভিযোগ ২০১২ সালে সাড়ে ৫ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করে আসছিলো। হঠাৎ করেই ২০১৯ সালে দিকে তারা বেড়াতে গেলে ঘরের দরজা ভেঙ্গে পুরো বাড়ি দখল করে নেয় এম এ মতিন। পুরোনো ভাড়াটিয়া সরিয়ে দিয়ে নতুন ভাড়াটিয়া হতভম্ব আলী আজম ছুটে যান থানায়। সাধারণ ডায়রিও করেন। ঘটনা এই পর্যন্তই তবে আলী আজম এখনো তার বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না। মতিন বাহিনীর হুমকি আর গুলির ভয়ে দুরে থেকে দেখে চলে যান। প্রবাস জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে কেনা এই বাড়িটাই ছিল শেষ অবলম্বন তার।
অপরদিকে লতিফ মিঝি জানান, তারা ১০ চালক মিলে এখানে জমি কেনেন। কেনার কিছু দিন পরই মতিন দাবী করে তার জমি। পরে মতিনের সার্ভেয়ার দিয়ে জমি মেপে দেখা যায় তার জমি নেই। তবু বাড়ি করতে গেলে বাধা দিচ্ছে মতিন বাহিনী। রাতে আধারে নির্মানাধীন বাড়ির রড কেটে নিয়ে গেছে ।
কথা আরেক ভুক্তভোগী খোকন কুন্ডের সাথে, মতিনের বাড়ি করার আগে ২০০১ তিনি জমি কিনে বাড়ি করেন। প্রথমে শুনেছেন আশে পাশের মানুষের জমি দখল করছেন। পরে কিছু দিন আগে জানতে পারি আমার বাড়িও দাবী করছে মতিন। প্রতিবাদ করায় আমার বাড়ির কেয়ারটেকারকে মারধর করে বের করে দিয়েছে। থানায় অভিযোগ দিয়েছে। সেই বিচারের আশ্বাসেই আছি।
এখানে শেষ আশে পাশে আরও বসত বাড়িতে দখলে ছোবল পড়েছে মতিনের। তার প্রাচীর থেকে কেউ উচ্চ বাড়ি করতে গেলেই বাধা। তার উপর কারো বাড়িতে ময়লা পানি ড্রেন ডুকিয়ে দিয়েছে। ভাড়াটিয়াদের মারধর করে বের করে দিচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে প্রাচীরের ওপাশ থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।
এছাড়া ২০১৭ সালে ১২ মে মতিনের প্রাচীর ঘেরা সীমানায় তারই বাগান বাড়ির কেয়ারটেকার ফারুক হোসেন মাটি চাপা দিয়া হত্যা করা হয়। সেই মতিনের সন্ত্রাসী বাহিনীর ইয়াসিন ও রকিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আবার তাদেরকেই জামিনে ছাড়িয়ে আনেন মতিন।
এ বিষয়ে খুন হওয়া ফারুকের মা মতিজা বেগম জানান, দীর্ঘ ৪ বছর পার হলেও ছেলে হত্যার বিচার পাইনি। যার বাড়িতে কাজ করতো, তার বাড়িতেই খুন হলো। মতিনের বাড়িতে কাজ করে এমন চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিলো পুলিশ। আবার তাদেরকে মতিনই জামিনে ছাড়িয়ে নিয়ে আসছে। এখন আল্লার কাছে বিচার চাওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।
এখানেই শেষ, এতো সব অভিযোগ শুনে সাভার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসন খান নিজেই উপস্থি হয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। কিন্তু মতিনের হামলার শিকার হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকেও। পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনিও।
তবে এতসব কিছুর মাঝে, আশার খবর হলো, গত ১২ নভেম্বর রাতে একই কায়দায় আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যক্তি ১৬ শতাংশ জমির বাউন্ডারি ভেঙ্গে জমি দখল করে ও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে আজাদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আজ শনিবার (১৪ নভেম্বর) তদন্ত করে চাঁদাবাজি , জমি দখল, চুরি ও হামলার মালা নেয় আশুলিয়া থানা পুলিশ।
আসামিরা হলো- আশুলিয়ার মধ্য গাজিরচট এলাকার মৃত হাজী শফিউল্লাহের ছেলে এম এ মতিন, নরসিংদী জেলা সদরের মৃত শহীদ মীরের ছেলে ইয়াছিন (৩০), আশুলিয়ার মধ্যগাজির চটের উষা পোল্ট্রির মোড় এলাকার বাবুর ছেলে বিপ্লব (২০) ও একই এলাকার বাবু (৪৫)। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের হয়।
কে এই এম এ মতিন, স্থানীয় ও পুলিশের মতে, সে কখনো ব্যাংক কর্মকর্তা, কখনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় কর্তা। আবার কখনো ব্যবসায়ী। তবে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় এতটুকুই জানা যায়। তবে গ্রেপ্তার হলে মতিনের আসল পরিচয় বেড়িয়ে আসবে। সেই অপেক্ষা স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগীর অভিযোগে ভিত্তি তদন্ত করে এম এ মতিনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।