দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারদর্শী সেনাবাহিনী গঠনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিয়েছিঃ প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা একুশ শতকের ভূ-রাজনৈতিক এবং সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারদর্শী সেনাবাহিনী গঠনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, সরকার একবিংশ শতাব্দীর ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি সময়োপযোগী, আধুনিক, প্রযুক্তিগতভাবে সুসজ্জিত এবং জ্ঞাননির্ভর বাহিনীতে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছে।

শনিবার সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০টি ইউনিটকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাভার ক্যান্টনমেন্টে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন এবং ২৪ বছর সংগ্রাম করে এই আওয়ামী লীগই জাতির পিতার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আমরা আমাদের একটা কর্তব্য মনে করি দেশকে উন্নত করা।

আমাদের সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীকে ‘স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, তাদের সার্বিক উন্নয়ন করাও আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ৯ পদাতিক ডিভিশনের ৮ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন ও এডহক ১১ বীর মেকানাইজড ব্যাটালিয়ন, ১০ পদাতিক ডিভিশনের ৬ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন ও ১৩ বীর, ১১ পদাতিক ডিভিশনের ৫৯ ইষ্ট বেঙ্গল সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন ও ১২ বীর, ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের ১৫ বীর সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন, ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন এবং স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস্ (এসআইএন্ডটি)- সংশ্লিষ্ট কমান্ডারদের কাছে জাতীয় পতাকা হস্তান্তর করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। যে আলোকে আমরা সেনাবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করে তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করছি

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ শেষে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই পতাকা। এই পতাকা হচ্ছে একটি জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক। এই পতাকার মান রক্ষা করা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব। প্রতিটি সৈনিক ও জনসাধারণ সবারই উচিত এই পতাকার মান রক্ষা করা।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যেকোনো ইউনিটের জন্য সম্মান ও গৌরবের বিষয়। আজকে আপনারা সেই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা অর্জন করেছেন। আমার পক্ষ থেকে এই পতাকা সেনাবাহিনী প্রধান আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। আমি পারলাম না, এটা আমার দুর্ভাগ্য। তবে, এই করোনাভাইরাসের মধ্যে যেখানে যাতায়াত সীমিত হয়ে গেছে সেখানেও আমি চেয়েছি আপনারা সময়মত যেন এই পতাকা প্রাপ্তির সম্মানটা অর্জন করতে পারেন। তাই, ডিজিটাল পদ্ধতিতে আজ আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।

জাতীয় পতাকা প্রাপ্ত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা এই গৌরব অর্জন করেছেন এবং আমি আশা করি জাতির আস্থা ও বিশ্বাস অটুট থাকবে। দেশ সেবায় আপনারা আত্মনিয়োগ করবেন। কারণ, দেশ মাতৃকার সেবা করতে পারাটাই সবথেকে বেশি গৌরবের। কাজেই সেদিকেই আপনারা বিশেষভাবে মনোনিবেশ করবেন।

বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী এখন শুধু দেশেই নয় বরং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাতেও অবদান রেখে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি সবসময় চেয়েছি আমাদের সেনাবাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনী যেন আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন এবং আধুনিক শিক্ষায় সুপ্রশিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠতে পারে।

করোনা মহামারি আবার দেখা দিলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরকারি অর্থ খরচ করার বিষয়ে সর্বোচ্চ মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। ঠিক যেটুকু আমাদের নেহায়েত প্রয়োজন তার বেশি এখন কোন পয়সা খরচ করা চলবে না।

বাজেটের অর্থ খরচে সংশ্লিষ্টদের মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ এর এই সংকটময় সময়েও মানুষের কল্যাণে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এবার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। যেটা দেয়া খুব কঠিন ছিল। তবু, আমরা দিয়েছি, তারপরও বলেছি যে অর্থ খরচের ব্যাপারে সবাইকে একটু সচেতন থাকতে হবে।

তার সরকার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২ হাজার ডাক্তার ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর সব সহযোগী সংগঠন থেকেও অসহায় মানুষকে এই কোভিড-১৯ মহামারিতে সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিসহ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে ২১টি প্যাকেজে প্রণোদনা, ক্ষতিগ্রস্ত ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য আমরা তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তাসহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এতে ১০ মিলিয়নের বেশি পরিবার উপকৃত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুরসহ ৫ মিলিয়ন মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে আবার আমাদের সহযোগিতা করতে হবে, চিকিৎসা করতে হবে, ওষুধ কিনতে হবে, হয়তো আরো ডাক্তার নার্স আমাদের লাগবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় দফার করোনা মহামারি দেখা দেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনো করোনাভাইরাসের প্রভাব আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আরেকবার হয়তো এই ভাইরাসের প্রভাব বা প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। কারণ ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আবার নতুন করে দেখা দিচ্ছে।

এখন থেকেই সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের এখন থেকেই সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। সেই দিকে আমরা আহ্বান জানাবো আপনারা এ ব্যাপারে যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন।

খাদ্য উৎপাদন আরো বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষিতে আমার নির্দেশনা ছিল প্রচুর পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। কোনো মতে যাতে খাদ্য সংকট দেখা না দেয়।

তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী একটা খাদ্য মন্দা দেখা দিচ্ছে। অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশে আমরা সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছিলাম বলেই আজকে সেই সমস্যাটা আমাদের দেখা দিচ্ছে না।করোনা মোকাবিলায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই করোনাভাইরাসে দীর্ঘ কয়েকমাস যাবৎ আমাদের সেনাবাহিনী ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা, তাদের রিলিফ বিতরণ করা, তাদের নানা ধরনের সহযোগিতা করা, করোনা সম্পর্কে তাদের সচেতনতা সব ব্যাপারেই বিশেষ ভূমিকা আপনারা পালন করে যাচ্ছেন। সেজন্য তিনি সেনাবাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নৌবাহিনী, বিমান বাহিনীর সদস্যদেরকেও ধন্যবাদ জানান।

সেনা সদস্যদের পেশাগত ভাবে দক্ষতার পাশাপাশি সৎ জীবন যাপনের তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনী দেশের সম্পদ এবং মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। আর কোনো সেনাবাহিনী যদি মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে না পারে তাহলে কখনো তারা কোনো বিজয় অর্জন করতে পারে না। তাই, আপনাদের সবাইকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এরা তো আপনাদেরই আপনজন, আপনাদেরই পরিবারের সদস্য। কাজেই তাদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে আপনাদের কাজ করতে হবে। আমাদের সেনাবাহিনী সব সময় মানুষের পাশে আছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় সব সময় নিবেদিত প্রাণ। সে জন্য জাতিসংঘ যখনই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য চেয়েছে, পুলিশ বাহিনী চেয়েছে আমরা সেটা দিয়ে যাচ্ছি-শুধুমাত্র আমরা যেহেতু বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাস করি। সংবিধানকে সমুন্নত রেখে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

গৃহহীনদের জন্য মুজিববর্ষে সরকারের কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। এদেশে কেউ গরীব-গৃহহীন থাকবে না। সবার উন্নত জীবন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close