ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ সাধারণত মেয়েদের পার্লারে গিয়ে চুলের যত্ন নিতে দেখা যায় তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রোটিন ট্রিটমেন্ট, হেয়ার স্পা ইত্যাদি নানা ধরনের যত্নের ব্যবস্থা থাকে পার্লারে।
কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের পার্লারে গিয়ে চুলের যত্ন না করাই ভালো। বাড়িতেই পার্লারের চুলের এমন যত্ন নেওয়া সম্ভব।
কেবল ঋতুভেদে নয়, চুলের প্রাকৃতিক যত্ন চাই সবসময়। হারবাল উপাদান ব্যবহারে চুলের গোড়া শক্ত হওয়ার পাশাপাশি বাড়বে চুলের জৌলুসও। চুল পড়া বন্ধে প্রাকৃতিক উপাদানে ঝটপট চুলের যত্নের কিছু প্যাক নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
চুলের ফলিকল বা গোড়া মজবুত করতে ব্রাহ্মী খুবই উপকারী। ব্রাহ্মীর সঙ্গে তিন থেকে চারটি আমলকি বেটে নিয়ে সামান্য পানি মিশিয়ে ব্রাহ্মী ও আমলকির হেয়ার প্যাকটি তৈরি করে নিন। এর ব্যবহারে চুল পড়া রোধের সঙ্গে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। চুল পড়া রোধ করার সঙ্গে প্রয়োজন নিয়মিত নতুন চুল গজাচ্ছে কিনা সেটি নিশ্চিত করা। তাই আমাদের উচিত এমন সব প্যাক ব্যবহার করা যার উপাদানসমূহ নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
অ্যালোভেরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম যা চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে বাদাম মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর হালকা গরম পানিতে মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এ প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এ প্যাক চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। ডিমের কুসুমের সঙ্গে এক টেবিল চামচ কাঠবাদামের তেল ও এক টেবিল চামচ মধু ভালোভাবে মেশাতে হবে। কাঠবাদামের তেলে থাকা ভিটামিন ই, ডি, পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়ামের অন্যতম উৎস যা চুলকে নরম ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
কালার করা চুলের যত্নে আমলকির হেয়ার মাস্ক দারুণ কাজ করে। রাফনেস ও ফ্রিজি হেয়ারের সমস্যা থাকলে এটি সপ্তাহে দু’দিন ব্যবহার করতে পারেন। আমলার সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ, অ্যালোভেরা জেল, ব্রাহ্মী ও হারবাল তেল কয়েক ফোঁটা দিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। এ প্যাকের সবগুলো উপাদানই চুলকে ময়েশ্চারাইজড করবে, চুলের ফাটা ভাব দূর করবে এবং কালার করার পর চুলে যে রুক্ষতা আসে, সেটারও রিপেয়ার করবে।
আর যাদের চুল শুষ্ক, তাদের চুল খুব দ্রুত রুক্ষ হয়ে পড়ে এতে চুল ভেঙে যেতে থাকে। শুষ্ক চুলের জন্য পেঁয়াজের রস ও অ্যালোভেরা তুলায় ভিজিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন। অথবা পাতা থেকে অ্যালোভেরা জেল সংগ্রহ করে ব্লেন্ড করে নিন। শ্যাম্পু করার ৪৫ মিনিট আগে চুলে লাগিয়ে রাখুন এটি। চুল পড়া তুলনামূলকভাবে কমতে দেখা যাবে।
এছাড়া চুল পড়া রোধে দুই টেবিল চামচ আমলকির সঙ্গে দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল ও আধা কাপ টক দই মিশিয়ে নিন। এ প্যাক ব্যবহারে শুষ্ক চুলে আসবে ঝলমলে সতেজতা। আর অ্যালোভেরা কাজ করে চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে। চুলকে উজ্জ্বল, মসৃণ ও নরম করে তুলতে অ্যালোভেরার জুড়ি নেই।
চুল পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে খুশকি। যাদের চুল তৈলাক্ত, তাদের চুলে প্রচুর খুশকি হয়ে থাকে। তৈলাক্ত চুলের জন্য একটি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে এক চা চামচ আমলকি ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তাছাড়া আমলকি গুঁড়ার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। চুলে এক ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে। এ প্যাক ব্যবহারে খুশকি ও চুল পড়া দু’টোই কমবে।
ব্যস্ত জীবনে এত কিছু করে প্যাক বানানোর সময় হয়ে উঠে না, তাই আমাদের উচিত এমন পণ্য ব্যবহার করা যেখানে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। বাজারে হারবাল উপাদানের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ব্র্যান্ড চুলের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান সমৃদ্ধ তেল উৎপাদন করছে।
এ ধরনের ব্র্যান্ডের মধ্যে ন্যার্চাস সিক্রেট হারবাল, আইনি হার্ব, কুমারিকা ও ভিক্টোরিয়াস বিউটি ব্র্যান্ড অন্যতম। এসব ব্র্যান্ডের উৎপাদিত পণ্যে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। চুলের যত্নে এসব পণ্য ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানো ভালো। হেয়ার ড্রায়ারের ঠাণ্ডা বাতাসেও শুকাতে পারেন। মনে রাখতে হবে নিয়মিত ব্যবহার করা চিরুনি ও ব্রাশ সবসময় আলাদা ও পরিষ্কার রাখতে হবে। চুলে অনেক বেশি রাসায়নিক, রং, ড্রায়ার বা আয়রন ব্যবহার না করাই ভালো।
/এন এইচ