দেশজুড়ে
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে রেল সংযোগে পণ্য পরিবহন উভয় দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধন হয়েছে গত সপ্তাহে। এর মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে, বড় পরিসরে এবং টেকসই একটি বাণিজ্যের সম্পর্ক তৈরি হলো দুই দেশের মধ্যে। ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস তার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায়।
সেখানে বলা হয়, ভারত থেকে প্রথম পণ্যবাহী ট্রেন কন্টেইনার বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে পৌঁছায় গত রবিবার। ইলেক্ট্রনিক সিল ব্যবস্থা থাকা এই ট্রেনগুলো পণ্যবহনকারী অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ। ট্রাকে পণ্য পরিবহনের থেকে অনেকগুণ সাশ্রয়ী এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন। রবিবার আসা প্রথম এই কন্টেইনারে সাবান ও শ্যাম্পুর মত এফএমসিজি পণ্যের পাশাপাশি টেক্সটাইলের ফেব্রিক্স বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনীতিকদের বরাতে জানা যায়, এই ট্রেনে পণ্য পরিবহনের কারণে ভারত ও বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনের খরচ অনেকগুণ কমে যাবে। এর ফলে উভয় দেশের অভ্যন্তরিণ দুর্নীতির কারণে এবং ট্রাক চালকদের যেই চাঁদা প্রদান করতে হয় বিভিন্ন স্থানে, তা প্রদান করতে হবে না। ফলে পরিবহণ খরচ অনেকগুণ হ্রাস পাবে।
ভারতের কর্মকর্তারা রবিবার এ বিষয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে জুলাই থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহনের গুরুত্বও তুলে ধরেন তারা। এই দুই ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ হয়, দক্ষিণ এশিয়ার যে কোন দেশের তুলনায় ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক ভালো।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার এই সম্পর্ক তৈরি হতে শুরু করে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় সরকার গঠনের পর। এই সম্পর্ক আরো ভালো হয় ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার গঠনের পর। এই দুই দেশের সম্পর্কের সর্বোচ্চ উন্নতি ঘটে ২০১৫ সালে ঢাকায় সফরকালে দুই দেশের মধ্যকার ছিটমহল সমস্যা সমাধানে নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে। এর মাধ্যমে ৪১ বছর ধরে চলমান সমস্যার সমাধানে দুই দেশ একমত হয়। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে বিষফোড়ার মতই ছিলো এই ছিটমহল সমস্যা।
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে শেখ হাসিনা দুর্দান্তভাবে সহায়তা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। ভারতের এই রাজ্যগুলোতে যখন কঠোর হস্তে এই সন্ত্রাসীদের দমন করা হয়, তখন বাংলাদেশের মাটিতে তাদের আশ্রয় দেননি শেখ হাসিনা। ফলে সন্ত্রাসীদের দমন সহজতর হয় ভারতের জন্য।
গত বছর ভারত সফরে গেলে এই দুই নেতা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের ‘সোনালী অধ্যায়’ তৈরির ঘোষণা দেন।
দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে গত সোমবার আরো একবার সেই ‘সোনালী অধ্যায়’-এর কথা প্রতিধ্বনিত হয়। এদিন বাংলাদেশকে ১০টি লোকোমোটিভ ব্রডগেজ (ট্রেনের ডিজেল ইঞ্জিন) হস্তান্তর করে ভারত। দুই দেশের মধ্যকার পরস্পরকে সহায়তার যেই দৃঢ় ইচ্ছা তার অংশ হিসেবে এই রেল ইঞ্জিনগুলো হস্তান্তর করা হয়, যার মাধ্যমে পরস্পরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে উভয়দেশ তাদের বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ কতে সক্ষম হবে।
গত দশক জুড়ে তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশে সরকার গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার অধীনে ২০১৯-১৯ অর্থ বছরে এশিয়ার সর্বোচ্চ শতকরা ৮.২ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ। দেশে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীর সংখ্যা কমে ৯ ভাগ হয়। বাংলাদেশকে উৎপাদনকারী দেশের হাব হিসেবে তৈরি করেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্য ও উন্নয়নেরও গুরুত্বারোপ করেন, যেন কোনভাবেই এই প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত না হয়। ফলে পাকিস্তানের থাকেও এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের তুলনায় মাথাপিছু ঋণের পরিমাণও বাংলাদেশের অর্ধেক।
ভারতের এক কর্মকর্তা জানান, স্বল্প সম্পদ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হয় তা বিশ্বকে দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। স্বল্প সম্পদ দিয়েও তার নেতৃত্বে দেশের মানুষের জন্য ভালো জীবন ব্যবস্থা তৈরি সম্ভব হয়েছে দৃঢ় পরিকল্পনার মাধ্যমে। ১৯৭৪ সালে যেই দেশকে হেনরি কিসিঞ্জার ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন, সেই দেশের অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের কাছে উদাহরণ।
সম্প্রতি ভারতের হাইকমিশনারকে নিয়ে একটি খবর প্রচার হয়, যেখানে দাবি করা হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পাননি ভারতের হাইকমিশনরা। অথচ এমন কিছুই যে ঘটেনি তা বেশ স্পষ্ট হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যে। বিষয়টিকে ‘অবাস্তব’ বলে স্পষ্ট মন্তব্য করেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন তিনি। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে তার বাংলাদেশে থাকার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যে কোন সময় তিনি দেখা করার জন্য অনুমতি চান।’
চীনের প্রতিষ্ঠানকে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের কাজ দেয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমের বক্তব্য প্রসঙ্গে আব্দুল মোমেন জানান, ‘চীনের এই প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন বিডিং এর মাধ্যমে নিয়ম মেনে এই কাজটি পেয়েছে। তিনি বাংলাদেশের এক বেসরকারি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ‘কেউ কেউ সংবাদপত্রে লিখছে, চীনের প্রতিষ্ঠানকে আমরা বাড়তি শুভেচ্ছা দিচ্ছি, যা একেবারেই বানোয়াট।
/আরএম