তথ্যপ্রযুক্তিরাজস্বশেয়ার বাজার
সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাটের ফাঁদে ই-কমার্স
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ফেসবুক-গুগল-ইউটিউবকে ধরতে গিয়ে ভ্যাটের কোপ দেয়া হয়েছে ই-কমার্সের ওপর।
এবারের বাজেটে ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমের বিজ্ঞাপনকে ভ্যাটের আওতায় আনতে ‘সোশ্যাল মিডিয়া ও ভার্চুয়াল বিজনেজ’ এর সংজ্ঞা দেয়া হয়। সেখানে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কিন্তু এ সংজ্ঞায় ঢুকে গেছে ই-কমার্স বা অনলাইন কেনাকাটা। ই-কমার্স উদ্যোক্তারা এতে বিস্মিত, এটা কীভাবে হলো তারা বুঝতে পারছেন না। যেখানে ই-কমার্স খাত আলাদা সেবা কোডে ভ্যাটের আওতামুক্ত ছিল।
আর এই ভ্যাট দিতে হবে ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে যারা পণ্য বিক্রি করেন তাদেরও। অনলাইন কেনাকাটায় এই ক্যাটাগরি এফ-কমার্স হিসেবে পরিচিত। দেশে এখন এমন হাজার হাজার ছোট ছোট উদ্যোক্তা রয়েছেন।
সুপরিচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকের ডিলের প্রতিষ্ঠাতা এবং বেসিস পরিচালক ফাহিম মাসরুর বলছেন, আগে একটি আলাদা সেবা কোডে ই-কমার্স বা অনলাইন কেনাকাটাকে অন্তর্ভূক্ত করে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছিল। এবার সেখানে অন্য একটি সেবা ঢুকেছে। আর ফেসবুক-ইউটিউবের বিজ্ঞাপন-ব্যবসায় করারোপে নতুন যে আলাদা খাত সংজ্ঞায়িত হলো সেখানে ই-কমার্স ঢুকে গেছে। এতে ই-কমার্সের উপরও সাড়ে ৭ শতাংশ করের খড়গ পড়েছে।
‘এতে দেশীয় ই-কমার্স একদমই শেষ হয়ে যাবে । খাতটি এখনও বিকশিত হয়নি।দেশীয় উদ্যোক্তাদের কেউ এখনও লাভের মুখ দেখা তো দূর উল্টো ক্ষতির চাপ নিয়ে খাতটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে’ বলছিলেন তিনি।
ফাহিম মাসরুর জানান, বাজারের দোকানগুলোতে বেশিরভাগ বিক্রেতারা প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায়, সেখানে বছরে ৫০ লাখ টাকার নীচে কেনাকাটা হলে ভ্যাট নেই। আবার যাদের অনেক বেশি কেনাকাটা তার বেশিরভাগ ক্যাশে। এতে তো অনৈতিকভাবে ভ্যাট এড়িয়ে যাবার সুযোগ থাকে। তাহলে মানুষ অনলাইন হতে এত টাকা ভ্যাট দিয়ে কেনো কিনবে ! এমন হলে সবাই অফলাইনে ফিরে যাবে।
‘ভারতের ই-কমার্সে প্রতিদিন ৫০ লাখ ডেলিভারি হয়। আর আমাদের হয় ৩০-৪০ হাজার। তুলনায় এক’শ ভাগের এক ভাগও না। এমন হলে সারা পৃথিবী এগিয়ে যাবে, আমরা পিছিয়ে পড়বো। ফেইসবুককে ধরতে গিয়ে আমাদের ধরার তো কোনো কারণ নেই’ উল্লেখ করেন এই বেসিস পরিচালক।
‘আমরা শেষ হয়ে যাবো, পথে বসে যাবো’ বলছিলেন আরেক সুপরিচিত ই-কমার্স প্রিয়শপ ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা সিইও আশিকুল আলম খান।
তিনি বলছেন, ই-কমার্সে মানুষ এমনিতেই ডেলিভারি চার্জকে বাড়তি বোঝা মনে করে। সেখানে এই সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাটের বোঝা ! কেউ এখানে কেনাকাটা করতে আসবে না।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন ই-ক্যাবের রুরাল ই-কমার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির এই চেয়ারম্যান বলছেন, ফেইসবুক-গুগল-ইউটিউবের বিজ্ঞাপনের ভ্যাটের সংঙ্গে ই-কমার্সকে কীভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হলো তা বোধগম্য না।
‘বিদেশি কোম্পানির আধিপত্যসহ নানা কারণে দেশীয় ই-কমার্স এখন কোনঠাসা। অনেকগুলো উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় এই ভ্যাটের কোপ, পুরো ইন্ডাস্ট্রি হারিয়ে যাবে’ বলছিলেন আশিকুল আলম খান।
উদ্ভুত বিষয়ে শনিবার উদ্যোক্তাদের নিয়ে এক বৈঠকে বসছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন ই-ক্যাব।
যেখান হতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে জানান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল।
তিনি বলেন, এখানে মিস কমিউনিকেশন করা হয়েছে। ফেসবুক-ইউটিউব বা অনলাইনে বিজ্ঞাপন আর ই-কমার্স তো এক জিনিস না। সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিলে হলে নতুন এই খাত ধসে যাবে।
এর আগে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অনলাইন কেনাকাটায় ৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর কথা বলা হয়েছিল। এতে ই-কমার্স, এফ-কমার্স মানে ইন্টারনেট মাধ্যমে সকল কেনাকাটায় ভ্যাট যুক্ত করার কথা বলা হয়।
পরে এটি ছাপার ভুল বলে জানিয়েছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। বাজেট পাসের সময় এই ভ্যাট আর রাখা হয়নি।
ওই সময় মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, ‘আমরা ভার্চুয়াল বিজনেস যেমন ফেইসবুক, ইউটিউব এগুলোর ওপর ট্যাক্স ধার্যের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কিন্তু অনলাইন বিজনেস আলাদা করেছি এবং এর ওপর ভ্যাট বসাইনি।’
তাহলে এ বছরই কি সেই ‘সংজ্ঞা বা ছাপার বা বোঝার ভুল’ এমন কিছু হলো’ বলছিলেন দেশের বড় এক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ই-কমার্স উদ্যোগের শীর্ষ কর্মকর্তা।
২০১৫-১৬ বাজেট ঘোষণায় ই-কমার্সকে প্রথমবারের মতো সুনির্দিষ্ট করে ভ্যাটের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তখন ই-কমার্সে ভ্যাটের হার ৪ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছিলো।
কিন্তু পরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দাবিতে তখন এই খাতকে শৈশব সময় ধরে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়। এরপর হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত নানা পরিস্থিতি শেষে ভ্যাটমুক্ত আছে খাতটি।