আমদানি-রপ্তানীপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ট্রানজিট চুক্তির প্রথম চালান নিয়ে গেলো ভারত
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তির পরীক্ষামূলক প্রথম চালান নিয়ে গেলো ভারত। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্যগুলো ভারতের ত্রিপুরার আগরতলার উদ্দেশ্যে রওনা করে। এ জন্য নির্ধারিত মাশুল ও ফি পরিশোধ করেছে ভারত। তবে পরীক্ষামূলক চালান হওয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কোনো ফি আদায় করেনি। চালানটিতে ছিল রড ও ডাল বোঝাই চারটি কন্টেইনার। আগরতলা স্থলবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে কন্টেইনার বোঝাই চারটি ট্রেইলার গ্রহণ করেন ত্রিপুরা রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
ট্রান্সশিপমেন্টের পরীক্ষামূলক প্রথম চালানেই ৫৩.২৫ মেট্রিক টন রড ও ৪৯.৮৩ মেট্রিক টন ডাল নিয়ে গেছে ভারত। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে পণ্যবোঝাই চারটি কন্টেইনার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আগরতলায় স্থলবন্দরে পৌঁছে। তবে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে রড-সিমেন্টের মতো চাহিদা সম্পন্ন পণ্য পরিবহনের ফলে আখাউড়া স্থলবন্দরের রফতানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণ পণ্য রফতানি হলেও গেল কয়েক বছর থেকে রফতানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে পণ্য আমদানি কমিয়ে দেয় সেখানকার ব্যবসায়ীরা।
সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন পাথর এখন শিলং থেকে সংগ্রহ করছেন বড় ব্যবসায়ীরা। আর নানা অজুহাত দেখিয়ে প্রায়ই মাছ আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়। আগে প্রতিদিন রড, সিমেন্ট, পাথর, কয়লা, তুলা, মাছ ও প্লাস্টিকসহ বভিন্ন পণ্যবোঝাই শতাধিক ট্রাক আগরতলা স্থলবন্দরে প্রবেশ করলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে এবং বর্ষা মৌসুম হওয়ায় এখন রফতানির পরিমাণ আরও কমেছে। বর্তমানে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ ট্রাক পণ্য যাচ্ছে আগরতলা স্থলবন্দরে। এর মধ্যে রড, কয়লা, পাথর ও মাছ রফতানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এখন শুধুমাত্র সিমেন্ট, ভোজ্য তেল, তুলা, প্লাস্টিক ও খাদ্যসামগ্রী যাচ্ছে। তবে সেগুলোর পরিমাণও খুব কম।
এদিকে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়ার আগে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে তিনশ টন রড আর সিমেন্ট রফতানি হত এক লাখ বস্তা। কিন্তু ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে রড-সিমেন্টের মতো চাহিদা সম্পন্ন পণ্য পরিবহন হলে স্থলবন্দরের রফতানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি রড-সিমেন্টের বাজার ধরে রাখতে এসব পণ্য ট্রান্সশিপমেন্টের আওতামুক্ত রাখা হোক।
আখাউড়া স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে থেকেই রফতানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। করোনাভাইরাসের কারণে এখন আরও করুণ দশা বন্দরের। এখন যদি রড-সিমেন্টের মতো চাহিদা সম্পন্ন পণ্য রফতানি না করা যায় তাহলে বন্দরের ব্যবসায়িক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়বে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মো. ইদন মিয়া বলেন, ট্রান্সশিপমেন্টের কারণে আমাদের রফতানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে। আমার দেশের পণ্য আমি ভারতে রফতানি করতাম, এখন তারা (ভারত) সরাসরি মাল নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে আমাদের দেশের ফ্যাক্টরির যে মাল রফতানি করতাম সেটি হ্রাস পাবে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা বলেন, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সরাসরি রফতানি হত। এখন কোলকাতা থেকে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছে। সেদিক বিবেচনা করলে বন্দরের রফতানি বাণিজ্যে কিছুটা প্রভাব পড়ে। রফতানি করলে আমাদের রেমিট্যান্স আসে। এখন তারা সরাসরি নিজেরটা নিজে নিয়ে যাচ্ছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি মাসে তিনশ টন রড রফতানি হয়। যদি ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে রড-সিমেন্ট পরিবহন কার্যক্রম অব্যাহত থাকে তাহলে স্থলবন্দরের রফতানি বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটবে। যেহেতু পরীক্ষামূলক চালান তাই আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশীদ জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের চুক্তির আওতায় প্রথম চারটি কন্টেইনার আগরতলায় গেছে। এর জন্য মাশুল এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে প্রসেসিং হয়েছে।
কোলকাতা থেকে আসা পরীক্ষামূলক প্রথম চালানের পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী আক্তার হোসেন বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী এবং জোরদার হবে। এটি পরীক্ষামূলক চালান, পরবর্তীতে আরও পণ্য আসার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।
/এন এইচ