দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

রাজধানীসহ সারাদেশে রেকর্ড হারে কমেছে মামলা ও অপরাধ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রাজধানীসহ সারাদেশে খুন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণসহ প্রায় সব ধরনের অপরাধ কমেছে। জানা গেছে, সরকারের তদারকি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সচেষ্ট প্রচেষ্টায় দেশে এখন অপরাধ ও নতুন মামলার সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়া ঘর থেকে বেরোলে করোনায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকায় এ সংখ্যা এখন আরো কমেছে।

“কোভিড ১৯” এর সংক্রমণের আতঙ্কে অন্য সবার মতো গৃহবন্দি থাকতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী ও অপরাধীদেরও। একারণে শহরের অপরাধমূলক কার্যক্রম কমে গিয়েছে চোখে পড়ার মত। শুধু তাই-ই নয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনী যৌথভাবে পরিস্থিতি তদারকি করছে। কাজেই, অপরাধীরা কোনরকম অপরাধ সংঘটনের সুযোগ পাচ্ছে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকিতে খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতির মত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডগুলো বেশ কিছুদিন ধরেই কম হচ্ছে। আমি মনে করি, স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশে অপরাধের পরিমাণ এত কমে গেছে।

তিনি জানান, রাস্তায় জনসমাগম অথবা গাড়ির জটলা না থাকায় ফাঁকা রাস্তায় পুলিশ যেকোনো জায়গায় খুব অল্প সময়েই পৌঁছে যেতে পারছে। এ কারণে অপরাধ করার আগে অপরাধীরা দ্বিতীয়বার চিন্তা করছে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীতে মোট মামলা হয় যথাক্রমে ২ হাজার ২৪৭ এবং ২ হাজার ১৩১টি। মার্চ মাসে মামলার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৫টি। এপ্রিলে তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৪৯টিতে। রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার থানায় গড়ে প্রতি মাসে মামলা হয় ৬০ থেকে ৭০টি। খুন, ছিনতাই, ধর্ষণসহ নানা কারণে দিনের বেশিরভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকে পুলিশ। তবে গত তিন মাসে সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।

পল্লবী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণত ৬০ থেকে ৭০টি মামলা প্রতিমাসে একটি থানায় রেকর্ড করা হয়। সেখানে গেলো মে মাসে রেকর্ড হয়েছে মাত্র ৪৫টি। থানায় আগের তুলনায় সেবাগ্রহীতার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এখন দিনে একটি বা দুটি ঘটনায় লোকজন আসে।

পুলিশের গণমাধ্যম শাখা বলছে, রাস্তায় ঘনঘন চেকপোস্ট, আইনশৃংখলা বাহিনীর নিয়মিত অবস্থান এবং মানুষের মাঝে করোনাভীতি সব মিলিয়ে এ অবস্থা।

ডেইলি বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত তিন মাসে রাজধানীর থানাগুলোতে মামলার সংখ্যা কমেছে প্রায় ৮৩ শতাংশ। সারাদেশে একই সময়ে মামলার সংখ্যা কমেছে ৬০ ভাগ। মাদকবিরোধী অভিযানও প্রায় শূন্যের কোঠায়। অপরাধ কমে যাওয়ায় থানাগুলোতে সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও কমে গেছে।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেছেন, করোনার কারণে অপরাধপ্রবণতা কিছুটা কমেছে। তবে পুলিশের বসে থাকার সুযোগ নেই। করোনার এ সময়ে সারাদেশে পুলিশ সদস্যরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। পুলিশ সদস্যরা কখনও মৃত ব্যক্তির সৎকার, জানাজা, করোনা আক্রান্ত পলাতক রোগীদের ধরে আনা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে করোনা আক্রান্তের বাসা, ভবন ও এলাকা লকডাউন করা, ত্রাণ বিতরণসহ এ ক্রান্তিকালে হাজারও কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

ডিএমপি সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে চুরি হওয়ার মোট ২ হাজার ২১১টি মামলা রেকর্ড হয়েছিল। ওই হিসেবে মাসে গড়ে ১৮৪টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২০৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৮৭টি, মার্চে ১৫৯টি চুরির মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাস চুরির ঘটনা বাড়লেও এপ্রিলে এসে তা কমেছে। এপ্রিলে ১৯টি গৃহে চুরির ঘটনা ও ২৭টি অন্যান্য চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া, গত বছর রাজধানীতে ২০৮টি খুনের ঘটনা ঘটে। সেই হিসেবে মাসে গড়ে ১৭টির বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ২১টি করে খুনের ঘটনা ঘটলেও মার্চে ১৭টি ও এপ্রিলে ৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।

একইভাবে গত বছর ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা ঘটেছিল ১৭৬টি। মাসে গড়ে ১৪টির বেশি ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা ঘটে। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম তিন মাস জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে যথাক্রমে ২১, ১৬ ও ১৬টি করে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা ঘটে। এপ্রিলে এই সংখ্যা কমে এসেছে ছয়টিতে। ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাও কমে এসেছে।

২০১৯ সালে ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ২ হাজার ৪০৮টি। সেই হিসেবে মাসে গড়ে দুই শতাধিক ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যথাক্রমে ১৭২, ১৯৪ ও ১৮৭টি ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এপ্রিল মাসে এই সংখ্যা কমে এসেছে ৪৯ এ। চলতি বছরে রাজধানীতে এখনও কোনো এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেনি। ২০১৯ সালে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৯৮টি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এই সংখ্যা ১২টি। এপ্রিল মাসে অপহরণের কোনও ঘটনা ঘটেনি।

নথি বলছে, গত বছর অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান উদ্ধারের ঘটনায় মোট ১৭ হাজার ১৬৬টি মামলা হয়েছিল। সেই হিসেবে মাসে গড়ে প্রায় দেড় হাজার মামলা হয়। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের জানুয়ারিতে ১ হাজার ৩৪৭টি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ২৩০টি, মার্চে ১ হাজার ১৫২টি মামলা হয়েছে। তবে এপ্রিল মাসে এই সংখ্যা কমে এসেছে প্রায় দশ ভাগের এক ভাগে। এপ্রিলে মোট ১২৩টি উদ্ধারজনিত মামলা হয়েছে।

অপরাধ দমনে ঘুম-খাওয়া ভুলে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন ব্যস্ত করোনাভাইরাস মোকাবিলায়। থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবাগ্রহীতাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ কেউ যদি থানায় আসেন বা বসেন তাহলে তিনি চলে যাওয়ার পর জীবাণুনাশক দিয়ে তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। নিজেরা সুরক্ষিত থাকার কামনার পাশাপাশি তাদের চাওয়া করোনা পরবর্তী বাংলাদেশেও বজায় থাকুক অপরাধ কমে যাওয়ার এই ধারাবাহিকতা।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close