প্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য
করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ প্রাণঘাতী করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। এ খাতের সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা ব্যাংকিং জটিলতার কারণে আটকে যাচ্ছে। ফলে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসএমই শিল্পোদ্যোক্তারা।
এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রণোদনার সুবিধা দেয়ায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে গড়ে ওঠা বিপুল পরিমাণ শিল্প ও ব্যবসার ক্ষেত্রে ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই ব্যাংকিং চ্যানেলের পাশাপাশি মাইক্রো-ফাইন্যান্সিং ইনস্টিটিউট (এমএফআই)-সহ নন-ব্যাংকিং সেক্টরের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের অপ্রাতিষ্ঠানিক, কুটির, ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসার জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনার সুবিধা দেয়া জরুরি।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) ‘কোভিড-১৯ অর্থনৈতিক সংকট এবং বাংলাদেশের এসএমই শিল্প খাত’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব তথ্য জানান ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও খাত সংশ্লিষ্টরা।
করোনা সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বিল্ড ও পলিসি এক্সচেঞ্জ’র যৌথ উদ্যোগে গঠিত পলিসি ডেভলপমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ‘রিসারজেন্ট বাংলাদেশ’ এ সংলাপের আয়োজন করে।
ভার্চুয়াল সংলাপে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। সংলাপে বক্তব্য রাখেন বিল্ড’র চেয়ারপার্সন আবুল কাশেম খান। পলিসি এক্সচেঞ্জ’র চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিল্ড’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম।
এতে বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মনজুর হোসেন, এসএমই ফাউন্ডেশন’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম, উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েশন’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না, তরঙ্গ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর ইয়াসমিন, সাবেক মুখ্য সচিব ও পিকেএসএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম, ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, আসিফ ইব্রাহিম, ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম, নারী শিল্পোদ্যোক্তা রুবিনা হোসেন, হুমায়রা চৌধুরীসহ এসএমই খাতের শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী নেতা, উন্নয়ন গবেষক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা আলোচনায় অংশ নেন। সংলাপের সুপারিশগুলো তুলে ধরেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শামস মাহমুদ।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা এসএমই শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রণোদনার প্যাকেজের সুফল নিশ্চিত করতে দ্রুত ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতে জন্য একটি বাস্তবসম্মত ডাটাবেজ তৈরির পরামর্শ দেন। পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অবস্থিত এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য বিসিক/এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেলাপর্যায়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের বাইরে প্রণোদনা পেতে পৃথক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ডিজিটাল মার্কেট প্লেস তৈরির পরামর্শ দেন। এছাড়া বিদ্যমান আর্থিক নীতির সংস্কারের পাশাপাশি উদ্ভাবনী এসএমই শিল্প খাত গড়ে তুলতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এবং স্থানীয় এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে কার্যকর লিংকেজ স্থাপনের ওপর জোর দেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক সুবিধা প্যাকেজ-২ এর অংশ হিসেবে ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল–সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ‘ব্যাংক–ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে। এ ঋণসুবিধার সুদের হারও হবে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।’
এটি (প্যাকেজ-২)-সহ মোট পাঁচটি প্যাকেজে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের সুফল নিশ্চিত করতে এসএমই ডাটাবেজ দ্রুত আপডেট করা হবে বলে জানান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এসএমই ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এই ডাটাবেজ আপডেট করবে। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা প্রণোদনার সুফল পাবেন।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার সুবিধা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে মনিটরিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এ কমিটি কাজও শুরু করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যমান কর্মসংস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃজন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থনীতির প্রাণশক্তি হিসেবে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বর্তমান সরকার করোনা পরিস্থিতিতেও জীবন-জীবিকা সচল রাখতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও শিল্পকারখানা চালু রাখার বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি বিদেশফেরত জনশক্তিকে উৎপাদনশীল এসএমই খাতে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে। করোনার ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদেশি উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি দেশীয় এসএমই খাতের জন্য নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে।
মন্ত্রী এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এসএমই শিল্পোদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করেন। সংলাপের যৌক্তিক সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও আয়োজকদের আশ্বস্ত করেন তিনি।
/এন এইচ