দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে, দাবি স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির স্থায়িত্ব নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের একটি বক্তব্যের পর সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। খোদ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এ নিয়ে কথা বলেছেন। তবে ডা. আজাদ দাবি করেছেন, তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং অনেকে না জেনেই সমালোচনা করছেন। তিনি যা বলেছেন সেটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নয়, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সে কথা বলেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এসে মহাপরিচালক ডা. আজাদ বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। এটি দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়েও বেশিদিন স্থায়ী হবে। যদিও সংক্রমণের মাত্রা উচ্চ হারে নাও থাকতে পারে। এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্যক উপলব্ধি করেন।’
তার এ বক্তব্যে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি যখন তুঙ্গে, তখন এ ধরনের বক্তব্য দেশবাসীকে আরও বেশি আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এই মুহূর্তে ডা. আজাদ কেন এমন বক্তব্য দিলেন তা নিয়েও আলোচনার ঝড় ওঠে। খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এ নিয়ে কথা বলেন। তিনি শুক্রবার (১৯ জুন) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সরকার যখন দিনরাত পরিশ্রম করে মানুষের মনোবল চাঙ্গা রাখার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কোনো কর্মকর্তার করোনার আয়ুষ্কাল নিয়ে অদূরদর্শী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য জনমনে হতাশা তৈরি করেছে।
দেশে করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর এন৯৫ মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এর কিছুদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার পরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব এবং একই বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের মন্ত্রণালয় বদল হয়। এ প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নিয়েও নানা গুঞ্জন তৈরি হয়। এমনকি তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন জনসম্মুখে না আসায় সেই গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলে। যদিও সুস্থতা লাভের পর সম্প্রতি কাজে যোগ দেন তিনি এবং বৃহস্পতিবার বুলেটিনে আসেন।
বুলেটিনের শুরুতে দেয়া বক্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাছে দাবি করেন, তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং অনেকে না জেনেই আলোচনা-সমালোচনা করছেন। এ বক্তব্যে তিনি একটিবারও করোনাভাইরাস বাংলাদেশে দুই-তিন বছর থাকবে বলেননি।
তার দাবি, ‘আমি বলেছি- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি সারাবিশ্বে এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। একটি সফল টিকা আবিষ্কার এবং পর্যাপ্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সফল প্রয়োগ না হওয়া পর্যন্ত দেশগুলোতে করোনার অস্তিত্ব থাকবে। ফলে এটি এক বছরের বেশি এমনকি দুই বা তিন বছর বা আরও বেশি সময় স্থায়ী হতে পারে। যদিও আমরা মনে করি, সংক্রমণের মাত্রা অনেক হ্রাস পাবে। বাংলাদেশ একটি জনবহুল ও অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। অপরপক্ষে করোনাভাইরাসও একটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে ভাইরাস। এ কারণে অসতর্ক চলাফেরা এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চললে দেশে সংক্রমণের হার মোকাবিলা করা কঠিন।’
‘বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছুকাল পরে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চ হার কমে আসতে পারে। কিন্তু করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ালে অনেক লুকায়িত এবং মৃদু কেইসও শনাক্ত হবে। সেক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যায় পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর নাও হতে পারে।’
ডা. আজাদ তার বক্তব্য ভুলভাবে না বোঝার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রতিরোধে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সহযোগিতায় মানসিকতায় এগিয়ে আসার কথা বলেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এমন দাবি করলেও তার বৃহস্পতিবারের বক্তব্যে ‘নাখোশ’ দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, দেশে যখন করোনা সংক্রমণ তুঙ্গে এবং প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে—এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের এমন বক্তব্য ‘গরমকালে শীতের ওয়াজ’র শামিল।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, সারাদেশের মানুষ এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুভয়ে ভীষণ আতঙ্কিত। অনেকেই করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না। হাসপাতালে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা মিলছে না। করোনা আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেনের সাপোর্ট মিলছে না। করোনার কারণে চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘটছে। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলে বসলেও আগের মতো বেচাকেনা নেই। এমন এক পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে তার এই বক্তব্য মানুষকে আরও ভীত করে তুলেছে। এ সময় মানুষকে সাহস জোগানো এবং পরিস্থিতির সাথে সমন্বয় করে চলার জন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেয়া উচিত ছিল তার।
/এন এইচ