প্রধান শিরোনামশিক্ষা-সাহিত্য
টিউশন ফি পরিশোধ না করলে অনলাইন ক্লাস থেকে বহিষ্কার!
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ টিউশন ফি আদায়ে নানা কৌশল অবলম্বন করছে রাজধানীর বেশ কয়েকটি নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অর্থ পরিশোধ না করলে অনলাইন ক্লাস থেকে বহিষ্কার করা, পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত না করাসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে অভিভাবকদের। কোথাও আবার শ্রেণি শিক্ষকদের মাধ্যমে অভিভাকদের ফোন করে টিউশন ফি আদায়ে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার এই ভয়াল পরিস্থিতির মধ্যে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মিরপুরের মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি পরিশোধে নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষকদের মাধ্যমে অভিভাবকদের কাছে ফোন দিয়ে বলা হচ্ছে, অর্থ পরিশোধ না করলে আপনার বাচ্চাকে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে না।প্রতিষ্ঠানগুলোর যুক্তি, টিউশন ফি আদায় করতে না পারলে শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে অভিভাবকদের ফোন দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, তাদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায়ে স্কুল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্কুল থেকে শ্রেণি শিক্ষকদের মোবাইলে এ সংক্রান্ত খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। অভিভাবকদের সেটি পাঠিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধে চাপ দিতে শিক্ষকদের বলা হয়েছে।
তারা বলেন, অনেক অভিভাবকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে তারা অপারগতা জানিয়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে অনেক অভিভাবক শারীরিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে তাদের পক্ষে এখন টিউশন ফি পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের বেঁচে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, সেখানে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা ফন্দি করে টিউশন ফি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুল বন্ধ অথচ শিক্ষার্থীদের বেতন আদায়ে অভিভাবকদের নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে। ‘শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খোঁজ শিক্ষকরা কখনও নেন না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মতিঝিল আইডিয়ালে ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিন মাসের অগ্রিম বেতন আদায় করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা স্কুল ফান্ডে জমা হয়। অথচ করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেও অভিভাবকদের কাছে ফোন করে টিউশন ফি আদায়ে শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
জিয়াউল কবির দুলুর অভিযোগ, ‘আইডিয়ালে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে তাদের বেতন পরিশোধে অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা অমানবিক। ৩০০টির মতো সেকশন অনুমোদনহীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ছয় মাসের বেতন মওকুফ করতে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দাবি জানিয়েছি। দ্রুত এটি বাস্তবায়নে নির্দেশনা জারির দাবিও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী বকেয়া বেতন পরিশোধ করেননি। তিন মাস পরপর টিউশন ফি পরিশোধের নিয়ম থাকলেও অনেকে চার থেকে পাঁচ মাসের বেতন দেননি। এ কারণে বকেয়া বেতন পরিশোধে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিউশন ফি আদায় না করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব নয়, শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে শ্রেণি শিক্ষকদের মাধ্যমে অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে টিউশন ফি মওকুফ করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্ভব নয়’।
শুধু বাংলা মিডিয়ামে নয়, রাজধানীর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ডিপিএস এসটিএস (দিল্লি পাবলিক) স্কুলে টিউশন ফি না দিলে অনলাইন ক্লাস থেকে রিমুভ (বাতিল) করে দেয়ারও হুমকির অভিযোগ উঠেছে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বকেয়া টিউশন ফি পরিশোধে গত ১৪ জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। যারা অর্থ পরিশোধ করবে তাদের অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করা হবে, অন্যদের নাম কেটে দেয়া হবে। এছাড়া পরবর্তী ক্লাসে তাদের উন্নীত করা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
করোনা মহামারির মধ্যেও অভিভাবকরা বকেয়া টিউশন ফি পরিশোধ করবেন বলে অভিভাবক ফোরামের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে ডিপিএস এসটিএস স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এজন্য তারা ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। এর আগে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে গত তিন মাসের টিউশন ফি’র ৫০ শতাংশ ছাড়ের দাবি জানালেও তা আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তবে সময় বাড়ানোর প্রস্তাবে আলোচনা করতে স্কুল কর্তৃপক্ষ সম্মতি দিয়েছে বলে অভিভাবক ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিল্লি পাবলিক স্কুলের অভিভাবক ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতিপক্ষ নয়। উভয়েই উভয়ের সমস্যাগুলো বিবেচনা করবেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। সব অভিভাবক সমস্যায় আছেন, এটি বলব না। তবে যাদের সমস্যা আছে তাদের ওপর তো চাপ দেয়া যাবে না। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
টিউশন ফি পরিশোধের সময় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি হয়েছে। এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। অভিভাবক ফোরামের পক্ষ থেকে স্কুল কর্মচারীদের সহায়তা করা হয়েছে। সব স্কুল কর্তৃপক্ষকে অভিভাকদের যৌক্তিক দাবি বিবেচনায় নিতে হবে। শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান উভয়েই উভয়ের পরিপূরক মনে করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনার এমন পরিস্থিতিতে সহনীয় ও মানবিক আচরণ করবে এমন দাবি আমরা করতেই পারি।
/এন এইচ