দেশজুড়ে
প্রেম ভাঙতে ঝাঁড়ফুক করায় কবিরাজকে খুন!
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল একটি মেয়ের। কিন্তু এ প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি মেয়েটির মা। তাই মেয়েটিকে নিয়ে তার মা কবিরাজ সায়ের মোহাম্মদ সাগরের কাছে যান এ প্রেমের সম্পর্ক ভাঙতে।
কবিরাজ সায়ের মোহাম্মদ সাগর ওই মেয়েটিকে ঝাঁড়ফুক করেন। জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েটির প্রেমিক কবিরাজকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন। বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মারধর করার পর হাসপাতালে মারা যান কবিরাজ সায়ের মোহাম্মদ সাগর।
কবিরাজ সাগর হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছয়জনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানতে পেরেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন।
শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) ভোরে ছয়জনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি সকালে কর্ণফুলী চরলক্ষ্যা এলাকার একটি গোয়ালঘর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত তিনটি লোহার পাইপ উদ্ধার করেছে র্যাব-৭।
গ্রেফতার ছয় যুবক হলো- কর্ণফুলী থানাধীন ইছানগর এলাকার মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে মো. মহিউদ্দীন (২২), তার ছোট ভাই মো. রাব্বী (২০), একই এলাকার জলিল আহমদের ছেলে মো. কাইয়ুম (২০), আবদুস সালামের ছেলে মো. ইরফান (২০), চরলক্ষ্যা এলাকার মো. ইয়াছিনের ছেলে নাইমুল হক সাকিব (১৯) ও সন্দ্বীপ উপজেলার কেঞ্জাতলী এলাকার আবদুল বাতেনের ছেলে আবদুল করিম রিফাত (২১)।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও তিনজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে র্যাব। এই তিনজন সায়ের মোহাম্মদ সাগরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন মোড়ে পাহারা দিয়েছে বলে জানতে পেরেছে র্যাব।
এদের মধ্যে মহিউদ্দীন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বলে জানতে পেরেছে র্যাব। ওই মেয়েটির সঙ্গে মহিউদ্দীনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কবিরাজের কাছে যাওয়ার তথ্য জানতে পেরে মেয়েটিকে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে ১০ দিন আগে গোপনে বিয়েও করেন মহিউদ্দীন।
র্যাব-৭ এর সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, মোহাম্মদ সাগর হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ছয়জন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। ছয়জন ছাড়াও আরও তিনজনের সম্পৃক্ততা জানতে পেরেছি আমরা। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, গ্রেফতার মহিউদ্দীন জানিয়েছে- তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল একটি মেয়ের। কিন্তু এ প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি মেয়েটির মা। তাই মেয়েটিকে নিয়ে তার মা কবিরাজ সায়ের মোহাম্মদ সাগরের কাছে যান এ প্রেমের সম্পর্ক ভাঙতে। কবিরাজ সায়ের মোহাম্মদ সাগর ওই মেয়েটিকে ঝাঁড়ফুক করে তাবিজ দেন।
ঘটনার ১০ দিন আগে গোপনে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করেন মহিউদ্দীন। পরে কবিরাজের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে কবিরাজ সায়ের মোহাম্মদ সাগরকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন।
ঘটনার দিন চাচির অসুস্থতার কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় কবিরাজ সায়ের মোহাম্মদ সাগরকে। চরলক্ষ্যা এলাকায় নিয়ে মারধর করার পর আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান কবিরাজ সায়ের মোহাম্মদ সাগর।
১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় কর্ণফুলী শিকলবাহা এলাকার বাড়ি থেকে কবিরাজ সায়ের মোহাম্মদকে চিকিৎসার কথা বলে ডেকে নেয় কিছু যুবক। সিএনজি অটোরিকশা করে তাকে চরলক্ষ্যা এলাকায় নিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তারা। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে মারা যান সায়ের মোহাম্মদ। হত্যাকাণ্ডের শিকার সায়ের মোহাম্মদ সাগর শিকলবাহা এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকে কর্ণফুলী থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করে আসছিল র্যাব৭ এর একাধিক টিম।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, এটি একটি ক্লু লেস মার্ডার ছিল। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে র্যাব-৭ এর একাধিক টিম কাজ করেছে। আমরা আসামিদের গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি।
গ্রেফতার ছয়জনকে কর্ণফুলী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. মাহমুদুল হাসান মামুন।
/আরএম