জীবন-যাপনপ্রধান শিরোনাম

মহামারী শেষে বদলে যাবে কাজ করার ধরন

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লুর পর বিশ্বব্যাপী মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে কভিড-১৯ মহামারী। ঘর থেকে বের হওয়া বা হাত মেলানোর মতো সামান্য আচরণের জন্যও আজকের দিনে বড় ধরনের দায় স্বীকার করতে হচ্ছে। এ সবকিছু ভবিষ্যৎ বদলের আভাস দিচ্ছে। মানবজাতির বর্তমান আচরণ আগামী দিনের ব্যবসার ও ভবিষ্যতে মানুষের জীবনযাপনের ধরন নির্ধারণ করতে যাচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসা বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তারা বাড়িতে থেকে কাজ করার পক্ষে সুপারিশ করে আসছেন। ডিজিটাল যুগের আবির্ভাবের পর বহু সংগঠনই নমনীয় কর্মঘণ্টাকে বিকল্প হিসেবে সামনে হাজির করেছে। এতে সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি কর্মীরা আরো ভালো জীবনযাপনের সুযোগ পেতে পারেন।

এদিকে গত এক দশকের প্রবণতা থেকে গিগ অর্থনীতিতে এমন একটি গোষ্ঠীর বিকাশ ঘটতে দেখা যাচ্ছে, যারা ফ্রিল্যান্সার ও স্বল্প পারিশ্রমিকে সন্তুষ্ট। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রেই ৫ কোটি ৭০ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, যা ২০১৪ সালের চেয়ে ৪০ লাখ বেশি। ফ্রিল্যান্সারস ইউনিয়ন ও আপওয়ার্কের এক সমীক্ষা অনুসারে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে এ ফ্রিল্যান্সারদের অবদান ১ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

গত বছরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসটি দ্রুত সারা বিশ্বে বিস্তার লাভ করে। ভাইরাসটি দ্রুত সংক্রমণের মুখে অ্যাপল, গুগল, টেসেন্টের মতো বৈশ্বিক জায়ান্টগুলো কর্মীদের ঘরে বসে কাজ করতে দেয়ার মতো পদক্ষেপ গ্রহণের দিকে ঝুঁকছে।

এদিকে ঘরে বসে কাজ করায় অফিসে কম ঝামেলা ও যাতায়াতে কম সময় ব্যয় হওয়ার কারণে বেশকিছুসংখ্যক ব্যবসা উৎপাদনশীলতা বাড়তে দেখছে। দূরে থেকে কাজ করার এমন বিকল্প আগে কেন পাওয়া যায়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে প্রযুক্তির উন্নয়নের সুবাদে এখন এ ধরনের নমনীয় ব্যবস্থার কার্যকারিতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

কভিড-১৯ মোকাবেলার পর বৈশ্বিক ব্যবসা যে আর আগের মতো থাকবে না, সেটি নিশ্চিত। ভবিষ্যতে কর্মীদের সামনে দূর থেকে কাজ করার প্রস্তাব একটি বিকল্প হিসেবে তুলে ধরা হবে। প্রাথমিকভাবে কর্মীদের মাসের কয়েক দিন বাসা থেকে কাজ করার অনুমতি দেয়া হতে পারে বা এটি দীর্ঘমেয়াদি কোনো বিকল্পে পরিণত হতে পারে। তবে এমন কিছু কাজ রয়েছে, যা কর্মস্থলে না এসেও পরিচালনা করা সম্ভব। এ মুহূর্তে কর্মী ও ব্যবস্থাপনা উভয় পক্ষই কর্মস্থলে না এসে কাজ পরিচালনা কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ নিয়ে কোনো মতবিরোধ থাকবে না।

বর্তমান এ সংকটের সময় প্রযুক্তির গুরুত্ব বাস্তবিকভাবে উপলব্ধি করা যাচ্ছে। নব্বইয়ের দশকে এ ধরনের কোনো সংকট এসে হাজির হলে হয়তো আমরা ডেলিভারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতাম, যা আজ অ্যাপের কারণে সম্ভব হচ্ছে। অতীতে যেসব খুচরা বিক্রেতা অনলাইন শপিংয়ের দিকে ঝোঁকেনি, মুনাফা বাঁচাতে তারা এখন সরবরাহ সুবিধা দিচ্ছে।

গত সপ্তাহে মার্কিন ই-কমার্স কোম্পানি অ্যামাজন জানায়, ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে চাহিদা বাড়ায় এক লাখ চালক নিয়োগ দেয়া হতে পারে। একই সঙ্গে সারা বিশ্বে প্রতি ঘণ্টা মজুরি বাড়াতে ৩৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হতে পারে।

বাংলাদেশেও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো আপদকালীন সময়ে নিয়োগ দিচ্ছে পার্ট-টাইম কিংবা ফুলটাইম হিসেবে।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close