বিশ্বজুড়ে

রাশিয়ার পুরো সরকার করল পদত্যাগ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ তার সরকার সহ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বার্ষিক স্টেট অফ দ্য নেশনের বক্তৃতা দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই এই ঘোষণা এসেছে।

পুতিন তার ভাষণে দেশটির সংবিধানে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছেন। প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদের নির্বাচনে পার্লামেন্টকে ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

বুধবার মেদভেদেভ ঘোষণা করেন, তিনি এবং তার সরকার পদত্যাগ করেছেন। সরকারের কার্যক্রমে তিনি সন্তুষ্ট।

পদত্যাগ গ্রহণ করে নতুন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত মন্ত্রীদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন।

বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ব্যাপক সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য দেশজুড়ে গণভোটের আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন পুতিন।

এতে ক্ষমতা প্রেসিডেন্সি থেকে পার্লামেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর হাতে চলে যাবে। ফলে ক্রেমলিন ছাড়ার পর নিজের শাসনের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ পাবেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলা হয় মেদভেদেভকে। ২০১২ সাল থেকে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এছাড়া ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।

মেদভেদেভকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন ধন্যবাদ জানালেও তার মন্ত্রিসভা অভিষ্ট লক্ষ্যে পুরোপুরি পৌঁছাতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে প্রেসিডেন্টশিয়াল সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি হিসেবে তাকে দায়িত্ব দিতে পারেন পুতিন।

১৯৯৯ সাল থেকে কখনো প্রধানমন্ত্রী কখনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন পুতিন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুতিনের বর্তমান ক্ষমতার মেয়াদ আগামী ২০২৪ সালে শেষ হবে।

মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি কী করবেন, সেই সিদ্ধান্ত এখনো প্রকাশ করেননি। কিন্তু বর্তমান সংবিধানের অধীন কেউ প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরপর দুই মেয়াদের পর আর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে দেশের রাজনৈতিক অভিজাতদের পুতিন বলেন, সংবিধানে পরিবর্তন আনার পক্ষে তিনি। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এটা অবশ্যই একটি বড় পরিবর্তন।

পার্লামেন্ট ও সুশীল সমাজের এই পরিবর্তনে সায় আছে মন্তব্য করে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, এতে পার্লামেন্ট, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূমিকা ও গুরুত্ব বাড়বে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বশীলতা ও স্বাধীনতা নতুন মাত্রা পাবে।

রাশিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, দেশটিতে কেউ দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন না। ফলে ২০২৪ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুতিন বর্তমান সংবিধানের অধীনে আর রাশিয়ার নেতা থাকতে পারবেন না। তাই সংবিধান পরিবর্তনের এমন প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

রাশিয়ার স্থানীয় দৈনিক দ্য মস্কো টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবিধানের এই আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে পুতিন ভবিষ্যতে আবার রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসছেন। পুতিনের সমালোচকদের দাবি, অতীতের মতো সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতেই এ পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা তার।

পুতিন ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট থাকার পর এক চালাকি করেন। সংবিধান সংশোধন করে তিনি প্রেসিডেন্টের চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়িয়ে ওই বছর রুশ প্রধানমন্ত্রী হন। প্রেসিডেন্ট করেন দিমিত্রি মেদভেদেভকে। তারপর ২০১২ ও ২০১৮ সালে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হন, তার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে।

১৯৯৯ সালে তৎকালীন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন পুতিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। অনেক রুশ তখন জানত না কে এই পুতিন। তার কয়েক মাস পর ইয়েলৎসিন অনেকটা নাটকীয়ভাবে পুতিনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করেন।

তারপর থেকে প্রায় দুই দশক ধরে পুতিন রাশিয়ার নেতা। ২০২৪ সালে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া পুতিনের প্রেসিডেন্ট পদে থাকা না থাকা নিয়ে খোদ রাশিয়া এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা রকম গুঞ্জন চলছে।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close