প্রধান শিরোনামবিশ্বজুড়ে
টাকা না দিলে ইরাক ছাড়ব না: ট্রাম্প
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ইরাকে ঘাঁটি তৈরির ব্যয় ফেরত না দিলে দেশটি থেকে মার্কিন সেনারা যাবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন সেনাদের ইরাক ছাড়তে হলে দেশটির ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
ইরাকে মার্কিন কিংবা কোনো বিদেশি সেনা থাকতে পারবেন না—গতকাল রোববার দেশটির পার্লামেন্টে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এ হুমকি দেন ট্রাম্প।
গত শুক্রবার বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান কাশেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর এই প্রস্তাব পাস করা হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই প্রস্তাব পাসের পর গতকাল ইরাকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। গতকাল রোববার রাতে এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক ব্যয়বহুল বিমান ঘাঁটি রয়েছে। শত শত কোটি ডলার এই ঘাঁটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের বহু আগে ঘাঁটি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেই অর্থ ফেরত না দিলে আমরা যাব না।’
মার্কিন সেনাদের ইরাক যদি ফেরত যেতে বলে এবং তা যদি বন্ধুত্বপূর্ণভাবে না হয়, তাহলে ইরাকের ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এমন নিষেধাজ্ঞা দেব, যা আগে তারা দেখেনি।’â€
ইরাকের পার্লামেন্টে অনুমোদিত প্রস্তাবে দেশটি থেকে সব বিদেশি সেনাকে ফিরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জাতিসংঘে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরাকি পার্লামেন্ট। ইরাকের আইনপ্রণেতারা মনে করেন, মার্কিন বাহিনী ইরাকে ঢুকে সোলাইমানিকে হত্যা করায় তাদের (ইরাক) সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে।
রয়টার্সের খবরে অবশ্য বলা হচ্ছে, ইরাক থেকে মার্কিন বাহিনীকে সরাতে নতুন আইনের প্রয়োজন হবে। যে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে, তার মাধ্যমে মার্কিন সেনা সরানো সম্ভব হবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরাকের চুক্তি রয়েছে।
২০০৩ সালের মার্চে গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুতের মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে লাখ-লাখ মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হলেও বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা দেশটিতে মোতায়েন রয়েছেন। এই মার্কিন সেনারা আন্তর্জাতিক জোটের অংশ হিসেবে দেশটিতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের পর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে কঠিন পরিস্থিতিতে আছে ইরাক। দেশটির জনগণের একাংশ ইরানের প্রতি সহানুভূতিশীল। সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের পর সেই সহানুভূতি আরও বেড়েছে। এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া ইরানের বেশ কিছু মিলিশিয়া বাহিনী ইরাকে তৎপর রয়েছে। অনেক গোষ্ঠীকে ইরান নানাভাবে সহায়তাও করে থাকে। তাই দেশটিতে এই গোষ্ঠীগুলোর হামলা বৃদ্ধির আশঙ্কায় রয়েছে ইরাক।
ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ও সংস্কৃতির ধারক ঐতিহ্যবাহী ৫২টি স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে, ট্রাম্পের এমন হুমকির সমালোচনা হলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে অটল রয়েছেন। যদিও গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে নিজ বক্তব্যে অটল থেকে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা রাস্তার পাশে বোমা পুঁতে রাখতে পারে, বোমা ফাটিয়ে আমাদের মানুষ মারতে পারে, আর আমরা তাদের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা স্পর্শ করতে পারব না? এভাবে কিছু চলে না।’
ঐতিহ্যবাহী স্থাপনায় সামরিক হামলা আন্তর্জাতিক আইন, ট্রাম্প প্রশাসন সমর্থিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রস্তাব এবং ঐতিহ্যবাহী সম্পদ সুরক্ষায় ১৯৫৪ সালের হেগ কনভেনশন অনুসারে যুদ্ধাপরাধের শামিল।
ট্রাম্প এবং তাঁর উপদেষ্টারা সাংবাদিকদের কাছে সোলাইমানিকে হত্যায় ড্রোন হামলার ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, সোলাইমানি আমেরিকানদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। যে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করার বিষয়টি তিনি বিবেচনা করবেন বলে জানান।
ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘যদি তা ঘটে, যদি তারা কিছু করে, তাহলে চরম প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’