জীবন-যাপন
যে গ্রামের সবাই কোটিপতি
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ পূর্ব-মধ্যাঞ্চলের উপকূলীয় প্রদেশ জিয়াংসুর একটি পরিপাটি গ্রাম হুয়াক্সি। গ্রাম হলেও আধুনিক শহরের প্রায় সব সুযোগ-সুবিধাই সেখানে বিদ্যমান। অথচ কয়েক দশক আগেও হুয়াক্সি ছিল আর দশটা সাধারণ চীনা গ্রামের মতো। গ্রামটির কর্দমাক্ত মেঠোপথে গরুর গাড়ি ও ঠেলাগাড়ি চলাচলের দৃশ্য আজও সেখানকার চল্লিশোর্ধ্ব অধিবাসীদের স্মৃতিতে অমলিন। তবে এখন গ্রামটির পাকা সড়কে চলাচল করছে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ ও ক্যাডিয়াকের মতো বিলাসবহুল গাড়ি।
হুয়াক্সি গ্রামটির গোড়াপত্তন ১৯৬১ সালে। গ্রামটি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেয়েছে মূলত সেখানকার বাসিন্দাদের অধিবাসীদের ঈর্ষণীয় আর্থিক উত্তরণের কারণে। বলা হয়, হুয়াক্সি হলো বিশ্বের (মতান্তরে চীনের) সবচেয়ে ধনী গ্রাম; যার কারণে এটি ‘সুপার ভিলেজ’ হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। গ্রামের দুই হাজার স্থায়ী বাসিন্দার সবারই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ১০ লাখ ইউয়ান (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি) রয়েছে। অর্থাৎ হুয়াক্সির স্থায়ী বাসিন্দাদের সবাই মিলিয়নেয়ার। প্রতিটি পরিবারের কাছেই অন্তত একটি গাড়ি রয়েছে। বসবাসের জন্য রয়েছে ভিলা। প্রত্যেক বাসিন্দাই সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পায়। আর এ সবকিছুই নিশ্চিত করে স্থানীয় প্রশাসন।
গ্রামের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য নব্বইয়ের দশকের শুরুতে একটি কারখানা চালু করেন রেনবাও। প্রথম দিকে এ কারখানায় কৃষিজমিতে সার ছিটানোর জন্য স্প্রে বোতল তৈরি করা হতো। শিগগিরই এর বার্ষিক মুনাফা দাঁড়াল আড়াই লাখ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ২ কোটি ১২ লাখ ডলারের বেশি)। ওই দশকেরই শেষের দিকে উ রেনবাও হুয়াক্সি গ্রামে ১২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও একটি স্টক মার্কেট চালু করলেন।
হুয়াক্সিবাসীদের দিনবদলের শুরু সেখান থেকেই। গ্রামে স্থাপিত সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের (যেগুলো আবার স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত) শেয়ারহোল্ডার সেখানকার অধিবাসীরাই। এসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক মুনাফার ওপর এক-পঞ্চমাংশ হারে লভ্যাংশ পান তারা। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মোট আয়ের অর্ধেকের বেশি আসে লৌহ ও ইস্পাত ব্যবসা থেকে। তারা মূলত ভারত ও ব্রাজিল থেকে কাঁচামাল আমদানি করে। আর উৎপাদিত পণ্য রফতানি করা হয় বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে।
হুয়াক্সির ৩০ কোটি ডলারের বেশি ফিক্সড অ্যাসেটের মালিক মূলত গ্রামটির স্থায়ী অধিবাসীরাই। বাইরের কারো এ সম্পদে অধিকার নেই। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামের বাসিন্দাদের যে বিনা মূল্যে শিক্ষা, বাসস্থান, গাড়িসহ আধুনিক জীবনযাপনের সুবিধা দেয়া হয়, তা ভোগ করতে পারে কেবল স্থায়ী বাসিন্দারাই। গ্রামটির বেশির ভাগ ভিলার আকার ও নকশা একই। বাইরে থেকে দেখে মনে হয় ছোট ছোট হাজারো হোটেল। হুয়াক্সিতে হেলিকপ্টার, ট্যাক্সি সেবাও পাওয়া যায়।
গ্রামটিতে রয়েছে ৭২ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন ‘লং উইশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল’। মূলত গ্রামের অর্থনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের জন্যই ৪৩ কোটি ডলার ব্যয়ে ৩২৮ মিটার উঁচু ভবনটি তৈরি করা হয়। গ্রামটি প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১১ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়।
নিষ্প্রভ জনপদ হুয়াক্সির অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার নেপথ্যে উ রেনবাওয়ের যুগান্তকারী কৌশল ও নেতৃত্ব তো রয়েছেই, পাশাপাশি এখানকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ২৫ হাজার কর্মীর (বেশির ভাগই অভিবাসী ও আশেপাশের গ্রামের অধিবাসী) অক্লান্ত শ্রমের ভূমিকাও কম নয়। সেখানকার কর্মীদের সপ্তাহে সাতদিনই কাজ করতে হয়।
/আরএম