খেলাধুলাপ্রধান শিরোনাম
সাকিবের ব্যাটে বাংলাদেশের জয়
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: জয়ের জন্য ১৩৯ রানের টার্গেট। রানের হিসেবে বড় কোনো লক্ষ্য নয় এটা। অথচ সহজ সেই টার্গেট বাংলাদেশ জিতল পথ অনেক কঠিন করে। একপাশ আগলে রেখে সাকিব আল হাসান ব্যাট করে গেলেন বলেই ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ হাসছে জয়ের হাসি।
৪ উইকেটের এই জয়ে ২৪ সেপ্টেম্বরে মিরপুরে ফাইনালের আগে বাংলাদেশ এখন বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামতে পারবে। ত্রিদেশীয় সিরিজে ঢাকা পর্বের দুই ম্যাচে জেতা আফগানিস্তান চট্টগ্রাম পর্বের দুই ম্যাচে হারল।
ওপেনিংয়ের সমস্যাটা রয়েই গেল বাংলাদেশের। ম্যাচ জেতার জন্য স্কোরবার্ডে লক্ষ্যমাত্রা তেমন বড়কিছু নয়। কিন্তু সেই স্কোরের পিছু তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনারই সিঙ্গেল ডিজিটে আউট। দুজনেই যে কায়দায় আউট হলেন রিপ্লে দেখলে লজ্জা পাবেন। কোথায় ধীরে ধীরে সামনে বাড়বেন, তা না করে দুজনের মনে হল শুরুতেই ছক্কা হাঁকাই। স্লো উইকেটে বল দেরিতে ব্যাটে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে দুজনেই শট খেলার টাইমিংয়ে গন্ডগোল হলো। সহজ ক্যাচ তুলে ফিরলেন দুজনেই আরেকবার মাথা নিচু করে।
৩.২ ওভারে মাত্র ১২ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর সাকিব ও মুশফিক-দুই সিনিয়র শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজনের মিলে যোগ করেন ৫৮ রান।
মুশফিক রহিম ১৪ রানে একবার জীবন পাওয়ার পরও ছক্কার লোভে যেভাবে উইকেট খোয়ালেন সেই আউটের পাশে কোচের একটা ফুটনোট লেখা উচিত-দায়িত্বহীন শট!
কয়েকটা বলে রান না পেলে মুশফিক রহিমের সামনে মনে হয় দুনিয়া শেষ! সুইপ-রিভার্স সুইপের মতো ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে শুরু করেন তিনি। উইকেটের অপরপ্রান্ত থেকে অধিনায়ক সাকিব তাকে বেশ কয়েকবার ‘বুঝ’ দিলেন। কিন্তু নিজেরটা ছাড়া সচারচর কারোর শোনেন না মুশফিক। সেই জটিলতায় পড়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে ফিরলেন ২৫ বলে ২৬ রান করে।
এই উইকেটে ম্যাচ জিততে হলে সিঙ্গেল নিয়ে সামনে বাড়লেই সহজেই জেতা যায়-সাকিবের ব্যাটে মিলল সেই দর্শন। প্রচুর দৌড়ে পরিশ্রম করে রান করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দলের জয়ে ব্যাট হাতে যেভাবে খেললেন তাকেই বলে দায়িত্ববান ব্যাটিং।
১৬ বলে ১৮ রান করা সাকিব একসময় ঠিকই রান গতির তেজ বাড়িয়ে নিলেন। উইকেটের প্রকৃতি বুঝে, ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করে গেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
সত্যিকার অর্থেই দায়িত্ব দেখালেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খানও। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় তাকে। যখন ফিরলেন ১৪ ওভারের সময় বোলিংয়ে এলেন। আর আক্রমণে এসেই সাফল্য। মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেললেন। প্রায় হাফ ক্রিজে পড়া রশিদের বলে সুইপ করার চেষ্টা করলেন মাহমুদউল্লাহ। ব্যাটে বলে হলো না। প্যাডে লাগল, পরিস্কার এলবি। ৮ বলে ৬ রান করে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ।
শেষ ৩৬ বলে ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন দাড়ায় ৪৪ রানের। হাতে জমা ৬ উইকেট।
৩৪ বলে হাফসেঞ্চুরি পাওয়া সাকিবের ব্যাটে সেই নির্ভরতার পথে সামনে বাড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু সাব্বির রহমান ও আফিফ হোসেনের চটজলদি আউটে আরেকবার ধাক্কা খায় বাংলাদেশের অগ্রগতি।
শেষ পর্যন্ত শেষেও ত্রানকর্তা সেই সাকিবই। শেষ পর্যন্ত ৪৫ বলে ৭০ রানে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক। অন্যপ্রান্তে মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটে ১২ বলে ১৯।
আফগানদের ১৩৮ রানের ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাই ৪৭ ও রহমাতুল্লাহ গুরবাজ করেন ২৯ রান। শেষের দিকে শফিকুউল্লাহ শফিক ১৭ বলে অপরাজিত ২৩ রান করেন। তবে আফগানিস্তানের ইনিংসের বেশিরভাগ সময় জুড়ে রইল বাংলাদেশের বোলিং কীর্তির গল্পগাঁথা! আর এই সাফল্যের অগ্রভাগে রইলেন আফিফ হোসেন। ৩ ওভারে ১ মেডেনসহ মাত্র ৯ রানে ৩ উইকেট পান আফিফ। নিজের প্রথম ওভারেই কোন রান না দিয়ে আফিফ তুলে নেন ২ উইকেট। ব্যাটিংয়ে সেই ধাক্কা খাওয়া আফগানিস্তান আটকে যায় ১৩৮ রানে। যে টার্গেট ছাড়িয়ে গেলো বাংলাদেশ সাকিবের ব্যাটিং বীরত্বে।