শিক্ষা-সাহিত্যস্বাস্থ্য
ব্রুসেলোসিস রোগের টিকা উদ্ভাবনে বাকৃবি গবেষকের সফলতা
বাকৃবি প্রতিবেদকঃ ব্রুসেলোসিস ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ। এটি এমন একটি ছোঁয়াচে জুনোটিক রোগ, যা পশু থেকে মানুষে এবং মানুষ থেকে পশুতে ছড়ায়। গবাদিপশুর ভ্রূণ নষ্ট, অকালে গর্ভপাত, বন্ধ্যত্ব এবং মানুষ ও পশু-পাখির মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই রোগ। দেশে প্রথমবারের মত গবাদি পশুর ব্রুসেলোসিস রোগের টিকা উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন গবেষকেরা।
প্রাণীর প্রজননতন্ত্রে সংক্রমিত হয়ে গর্ভপাত, বন্ধ্যত্ব ও মৃত বাচ্চা প্রসবজনিত জটিলতা সৃষ্টিকারী ওই রোগের টিকা উদ্ভাবনে প্রায় দেড় বছরের গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান ও তার সহযোগী গবেষকেরা। প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন ডা. আব্দুল্লাহ আল মারুফ, ফারজানা ইয়াসমিন, সুকুমার রায়, আনন্দ চৌধুরী।
গবেষকরা বলেন, ব্রসেলোসিস প্রতিরোধে আমরা বাংলাদেশের গবাদি পশুতে ব্রুসেলা বায়োভার-৩ সনাক্ত করে সেখান থেকে হিট কিলড্ ভ্যাক্সিন তৈরী করেছি। গবেষণার কার্যক্রমে আমরা গর্ভপাত ঘটেছে এমন গাভী থেকে মৃত বাচ্চা ও গর্ভফুল নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করেছিলাম। পরে এসব নমুনা থেকে নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে কালচার এর মাধ্যমে জীবাণু আলাদা করি। পরে সেই জীবাণুকে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে অকার্যকর করা হয় যেন তা প্রাণিদেহে রোগ সৃষ্টি করতে না পারে। টিকা হিসেবে এর কার্যকারিতা অবলোকন করার জন্য অকার্যকর জীবাণু গিনিপিগের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। প্রতিসপ্তাহ অন্তর নয় সপ্তাহ পর্যন্ত ফলাফল রেকর্ড করা হয়। দেখা যায় দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই টিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা শুরু করেছে। এটি চতুর্থ সপ্তাহে সর্বোচ্চ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এরপরে এটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে এবং নবম সপ্তাহে এর কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা পাওয়া যায় নি।
টিকা বাজারজাতকরণের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, উদ্ভাবিত টিকাকে আরও কার্যকরী এবং মানসম্মতভাবে তৈরি করার জন্য গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রাণীদেহে এই টিকা আশানুরূপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে এটি বাংলাদেশে বাজারজাত করা সম্ভব হবে। এত কৃষকদের আর অনাকাঙ্খিত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না।
আতিকুর/আরএম