প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন

কাশ্মীর ইস্যু: সৌদি আরব কেন ভারতকে সমর্থন দিচ্ছে?

ড. ফুয়াদ হোসেনঃ সম্প্রতি ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীর নিয়ে সারা বিশ্বে নতুন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। এতে কাশ্মীর এবং পাকিস্থানসহ সমগ্র বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে পাকিস্থান শুরু থেকেই ব্যাপক কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়। তবে সেখানে বেশি সুবিধা করতে পারেনি পাকিস্থান। এরপর পাকিস্থানসহ মুসলিম উম্মাহ চেয়েছিল অন্তত: মধ্যপ্রাচ্য এবং ওআইসি কাশ্মীরীদের অধিকার নিয়ে সরব হোক। সেটি তো হয়ইনি বরং সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন সম্প্রতি এর উল্টো করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত সপ্তাহে ওই দেশ দু’টি সফরে গেলে মোদিকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয় দেশ দু’টি।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সেদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ”জায়েদ মেডেল” দেয়। এসময় মোদী সংযুক্ত আরব আমিরাতকে তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি বলে মন্তব্য করেন। এতে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের কাছে কাশ্মীরের চেয়ে ভারতের গুরুত্বই বেশি। কিন্তু কেন?

এ বিষয়ে ভারতের সাবেক কুটনীতিক আহমেদ তালমিজ বিবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন – ২০০৬ সালে যখন ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে সেীদি আরবের সুলতান আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজকে বিশেষ অতিথি করা হয়, তখনই উষ্ণ সম্পর্কের শুরু। গত বছর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও ভারত সফর করেছেন। শুরুর দিকে ভারত ও সৌদি আরবের সম্পর্ক জ্বালানী ও অর্থনৈতিক নির্ভর থাকলেও ২০১০ সালের পর রিয়াদ এবং দিল্লি কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঘোষণা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন – মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই কাশ্মীর ইস্যুকে ভারত-পাকিস্থানের অভ্যন্তরীন বিষয় বলে এড়িয়ে যেতে চাইছে। বিশ্লেষকদের দাবি মূলত: দুইটি কারনে পাকিস্থানের কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ- বিশেষত: সৌদি আরব।

প্রথমত: গত দশ বছরে পাকিস্থানের দুর্বল অর্থনীতি এবং দ্বিতীয়ত: ভারত, ইসরাইল ও আমেরিকাকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠায় সৃষ্ট বলয়ের রাজনীতি।

ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স-এর গবেষক ফজলুর রহমানের মতে- গত ১০ বছরে পাকিস্থানের অর্থনীতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন পাকিস্থানকে বোঝা মনে করে।

অন্যদিকে পাকিস্থান সম্প্রতি ইয়েমেন, সিরিয়া ও লেবানন ইস্যুতে সৌদি আরবকে সমর্থন দেয়নি। এমনকি ইয়েমেনে সৈন্য পাঠাতেও অস্বীকার করেছে দেশটি। এসব কারনে আমেরিকার কথিত সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার নামে মধ্যপ্রাচ্যে নির্বিচারে সাধারন মানুষ হত্যায় সহযোগিতা না করাটাই পাকিস্থানের জন্য বুমেরাং হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন – সৌদি আরব যেকোন মূল্যে মধ্যপ্রাচ্যে একক আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। তাদের এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে মূল সহযোগী হলো ভারত, ইসরাইল আর আমেরিকা। আর এসব কারনেই ভারতের প্রতিই ঝুঁকছে সৌদি আরব।
তবে ভারতের অপর ঘনিষ্ট মিত্র ইরানের সাথে সৌদির তিক্ত সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত সৌদি আরব – ভারত সম্পর্কের অন্তরায় হবে নাকি ভারত ইরানকে ছেড়ে সৌদির সাথেই গাঁটছড়া বেঁধেই থাকবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না।
/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close