রাকিবুল হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া থেকে ফিরে : বগুড়া শব্দটা আলোচনায় এলেই চলে আরেকটা শব্দ। দই। বগুড়ার দই। উত্তরবঙ্গের ‘গেটওয়ে’ বলে পরিচিত বগুড়া জেলা। কিন্তু দই কথাটা যেন এই জেলার নামের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার দইয়ের সুনাম দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বগুড়ায় বাহিরের কেউ বেড়াতে এলে তার যেন দইটা চাখা চাই-ই চাই।
বগুড়ার দই কেন ও কিভাবে বিখ্যাত?
প্রায় দেড়শ বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঘোষ পরিবারের হাত ধরে বগুড়ায় দইয়ের উৎপাদন শুরু। পরবর্তী সময়ে বগুড়ার নওয়াব আলতাফ আলী চৌধুরীর (পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর বাবা) পৃষ্ঠপোষকতায় শেরপুরের ঘোষ পরিবারের অন্যতম সদস্য গৌর গোপাল বগুড়া শহরে দই উৎপাদন শুরু করেন। পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বগুড়ায় এসে দইয়ের স্বাদ পেয়ে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠান এই দই।
বিদেশে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি সর্বপ্রথম ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ বছরের গোড়ার দিকে তৎকালীন বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন এন্ডারসন বগুড়া নওয়াববাড়ি বেড়াতে এসে প্রথম দইয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন। তাকে কাচের পাত্রে তৈরি করা বিশেষ ধরনের দই খেতে দেওয়া হয়। লোভনীয় স্বাদের কারণে গভর্নর এন্ডারসন বগুড়ার দই ইংল্যান্ডে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
দই উৎপাদন করা হয় কিভাবে?
বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা কিংবা অঞ্চলে উৎপাদিত হলেও কিছু বিশেষত্বের কারণে ‘বগুড়ার দই’-এর খ্যাতি দেশজুড়ে। উৎপাদন ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে কারিগরদের (উৎপাদক) বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তারা যত্নবান হওয়ায় বগুড়ার দই স্বাদে-গুণে তুলনাহীন।
দইয়ের দাম-দর
সাধারণ ক্রেতা মো. মশিউর রহমান জানান, প্রতিপিজ স্পেশাল দইয়ের দাম ১৬০ টাকা থেকে ২৫০ পযন্ত। ভিন্ন উৎসবের দিন গুলোতে দাম বেড়ে যায়। বগুড়া দই ঘরের জেনারেল ম্যানেজার জানান, তাদের দই দেশের বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে তারা যে প্যাকেটে দই দেন তা শীতকালে থাকে ৪/৫ দিন। আর গরম কালে থাকে ২/৩ দিন।
উত্তরাঞ্চলে কোন বিদেশি বেড়াতে এলে তারা ফেরার সময় দই কিনে নিয়ে যান। হাতে হাতে করেই এই দই পৌঁছে যায় বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে বগুড়া শহরের এশিয়া সুইটমিট ও দই ঘর, চেলোপাড়ার কুরানু, নবাববাড়ীর রুচিতা, কবি নজরুল ইসলাম সড়কের আকবরিয়া, বিআরটিসি মার্কেটের দইবাজার, মিষ্টিমহল, সাতমাথার দইঘর, মহরম আলী, শেরপুর দইঘর, চিনিপাতাসহ অর্ধশতাধিক শো রুমে দই বিক্রি হচ্ছে।
শেরপুর দই ঘরের মালিক আব্দুল হাকিম জানান, ওজন দিয়ে তাদের দই বিক্রি হয় না। বিক্রি হয় প্রতিপিস হিসেবে। দই তৈরির যাবতীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে দিগুণ, এ কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তাদের শো রুমে বিভিন্ন স্বাদের দই পাওয়া যায়। মিষ্টি দইয়ের পাশাপাশি বিক্রি হয় টক বা সাদা দই।
আরএইচ/আরএম