করোনাকৃষিশিল্প-বানিজ্য

৬০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি দেবে সরকার

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে লকডাউন পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকটে বোরো ধান কাটা নিয়ে তৈরি হয় শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা। আবার ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার আগে তড়িঘড়ি করে ক্ষেতের ধান কোনোমতে উঠাতে সক্ষম হন কৃষকরা। এর পরও কিছু বোরো ধান নষ্ট হয়েছে উপদ্রুত বেশ কয়েকটি জেলায়।

একাধিক কৃষি অর্থনীতিবিদ বলছেন, করোনাভাইরাসের সময় কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ঘাটতি ফুটে উঠেছে। ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার প্রয়োজনীয় সংখ্যায় কৃষকদের কাছে থাকলে বোরো ধান ঘরে তুলতে এতটা শঙ্কা আর অনিশ্চয়তায় পড়তে হতো না। আর সেই উপলব্ধি থেকে সারা দেশে কৃষকদের জন্য ভর্তুকিতে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ৬০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষকদের যন্ত্রপাতি দেওয়া হবে। সমতল ও হাওর সব জায়গার কৃষকই এই হারে ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি কিনতে পারবেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণে এরই মধ্যে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। ‘খামার যান্ত্রিকীকরণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। পুরোটারই জোগান দেওয়া হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। এটি দ্রুতই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপন হচ্ছে।

কৃষিসচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ কতটা জরুরি, তা এবার করোনাভাইরাস আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। কৃষিকে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে পুরোপুরি যান্ত্রিকীকরণ করতে চাই। সে ক্ষেত্রে সরকার কৃষকদের সব ধরনের যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি দেবে। কৃষকের চাহিদার ভিত্তিতে যন্ত্রপাতি দেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, বাড়ির সামনে পতিত জমিতে সবজি ও ফল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। কারো বাড়ির সামনে এক শতাংশ জমি থাকলে সেই জমি যাতে খালি না পড়ে থাকে সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন ও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, চারা রোপণ, ফসল কাটা, বস্তাবন্দি করা, শুকানো, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ—সব ক্ষেত্রেই কৃষকদের যন্ত্রপাতি দেবে সরকার। প্রাথমিকভাবে দেড় হাজার কম্বাইন হারভেস্টার কেনা হবে। চাহিদার আলোকে পরে আরো কেনা হবে। এ ছাড়া ধান কাটার জন্য রিপার মেশিন ও চারা রোপণে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দেওয়া হবে কৃষকদের। পাওয়ার টিলার, মিনি কম্বাইন হারভেস্টার ও ধান শুকানোর ড্রায়ারও কেনা হবে। এসব যন্ত্রপাতি কিনতে ব্যয় হবে তিন হাজার ১৯৮ কোটি টাকা।

দেশে যেসব কম্পানি কৃষিসংশ্লিষ্ট এসব যন্ত্রপাতি উৎপাদন কিংবা আমদানি করে, তাদেরকে আগে তালিকা করে তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তারা যেসব যন্ত্রপাতি আনবে সেগুলো গঠিত কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হবে। যন্ত্রপাতিগুলো পরীক্ষা হবে গাজীপুরের বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (বিরি)। সরকার গঠিত সাত সদস্যের কমিটি যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে যথাযথ হলে তা কৃষকের কাছে বিক্রির জন্য বিবেচিত হবে। কৃষক তাঁর সুবিধামতো যেকোনো দোকান থেকে ৪০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করে যন্ত্র কিনে নিয়ে যাবেন। বাকি ৬০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করবে সরকার। কৃষক চাইলে একক বা যৌথভাবে কিনতে পারবেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে দেশে জমি চাষ, সেচ, কীটনাশক ও বালাইনাশক ছিটানোর ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। তবে রোপণ, বপন, সার প্রয়োগ, ফসল কাটা, মাড়াই, বাছাই, উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণে এখনো পিছিয়ে রয়েছে। নতুন নেওয়া প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিতে ব্যাপক যান্ত্রিকীকরণ হবে। আগামী বোরো ফলনের আগেই কৃষকদের মধ্যে যন্ত্রপাতি দেওয়া সম্ভব হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close