বিশ্বজুড়ে
৩০ মিনিটের মধ্যে দেহ টুকরো টুকরো করা হয়
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ওয়াশিংটন পোস্টের বহুল আলোচিত সাংবাদিক জামাল খাসোগির শেষ কথা ছিল- ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’। ২০১৮ সালের ২রা অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি আরবের কনসুলেটের ভিতর প্রবেশ করার পর তাকে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে দিনের পর দিন রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। তবে হত্যাকারের চূড়ান্ত মুহূর্তে যে কথোপকথন হয়েছিল তার ওপর ভিত্তি করে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুরস্কের সরকারপন্থি পত্রিকা দ্য সাবাহ।
পত্রিকাটি বলছে, খাসোগিকে হত্যা করে কীভাবে তার দেহ কনস্যুলেটের বাইরে নেওয়া হবে, সেসব বিষয় উঠে এসেছে ওই অডিওতে। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে খাসোগিকে হত্যা ও তার দেহ টুকরো টুকরো করা হয়। শেষ মুহূর্তে জামাল খাসোগির সঙ্গে কী ঘটেছিল, তার একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছে তুরস্কের গোয়েন্দারা। তাতে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
অনলাইন বিবিসি, বিজনেস ইনসাইডার বলছে, সৌদি আরবের নাগরিক জামাল খাসোগি। তিনি ছিলেন সৌদি আরবের সরকারের কড়া সমালোচক। ফলে প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান দায়িত্বে আসার পর যখন ব্যাপকহারে ধরপাকড় করা হয়, ওই সময়ে খাসোগি পালিয়ে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই বাস করতে থাকেন। কলাম লিখতে থাকেন ওয়াশিংটন পোস্টে। এরই মধ্যে তুরস্কের একজন নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়ে যায়। এ জন্য তিনি ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসুলেটে যান প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে। সেখানেই সৌদি আরবের ১৫ সদস্যের একটি ঘাতক দলের হাতে খুন হন খাসোগি।
দৈনিক ‘সাবাহ’ গোয়েন্দা অডিওর উদ্ধৃতি দিয়ে করা বলেছে, খাসোগি কনস্যুলেটে ঢোকামাত্রই পরিচিত কেউ একজন তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সাবাহ বলছে, খাসোগিকে অভ্যর্থনা জানানো ওই ব্যক্তির নাম মেহের আবদুল আজিজ মুতরিব। মেহের আবদুল আজিজ একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা সদস্য ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেহরক্ষী।
খাসোগিকে তিনি যেসব কথা বললেন তা রয়েছে ওই অডিওতে। এতে তিনি বলেন, ‘বসুন খাসোগি। আপনাকে সৌদিতে ফেরত নেওয়া হবে। ইন্টারপোল আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। ইন্টারপোল চায়, আপনি ফিরে যান। তাই আপনাকে নিতে আমরা এখানে এসেছি।’
জবাবে খাসোগি বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আমার হবু স্ত্রী বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।
এরপর মুতরিব খাসোগিকে একটি বার্তা লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। খাসোগিকে মুতরিব বলেন, ‘আপনার ছেলের কাছে এই কথাগুলো লিখুন- ‘যদি আমার (খাসোগির) সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারো, তাহলে চিন্তা করো না।’
তার নিদের্শমতো খাসোগি ওই বার্তা লিখতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর মুতরিব তাকে বলেন, ‘আমি বলছি, এটা লিখুন জনাব খাসোগি। দ্রুত এটা লিখুন। আমাদের সাহায্য করুন, তাহলে আমরাও আপনাকে সাহায্য করতে পারব। কারণ শেষমেশ আমরা আপনাকে সৌদিতে ফিরিয়ে নেবই। আর যদি আমাদের সাহায্য না করেন, তাহলে কী ঘটবে তা বুঝতেই পারছেন।’
এরপর খাসোগিকে টেনে নেওয়ার শব্দ শোনা যায়। চেতনা হারানোর আগে খাসোগির শেষ কথা শোনা যায়, ‘আপনারা কী করছেন। আমার হাঁপানির সমস্যা আছে। আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না।’
এ সময়ের মধ্যেই খাসোগির মাথায় একটি প্লাস্টিক ব্যাগ পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই অডিওতে বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির শব্দ পাওয়া যায়। এ সময় চারপাশ থেকে হত্যাকারী দলকে খাসোগিকে মাঝে মাঝে বেশ কিছু প্রশ্ন করতে শোনা যায়।
খাসোগি ওই কনস্যুলেটে ঢোকার আগেই মেহের আবদুল আজিজ মুতরিবকে শোনা যায় কাউকে প্রশ্ন করছেন, ‘পুরো দেহ কি কোনো ব্যাগের মধ্যে ঢোকানো যাবে?’ এর উত্তরে সালাহ মোহাম্মদ আবদাহ তুবাইগি নামে খ্যাতিমান সৌদি ফরেনসিক চিকিৎসক বলেন, ‘না, খুব ভারী হবে। (খাসোগি) অনেক লম্বা।’ এ সময় আবদাহ তুবাইগিকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘যদিও আমি মৃতদেহের ওপর ছুরি চালাই। তবে আমার কাজে আমি খুব দক্ষ।’ তিনি যোগ করেন, ‘কাজের সময় সাধারণত এক পেয়ালা কফি পান করি। একটা সিগারেটে টান দিই। এর মধ্যেই সব কাজ শেষ করে ফেলব। কাজ শেষে আপনারা বিচ্ছিন্ন অংশগুলো প্লাস্টিকে মুড়ে সু্যুটকেসে ঢুকিয়ে বাইরে নিয়ে যাবেন।’
/আরএইচ