দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
১৬ বছর সাজা খেটে খালাস পেলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হুমায়ুন
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ২০০৪ সালে ৮ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়েছেন কুমিল্লা জেলার লাকসাম পৌরসভার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির।
ফাঁসির আসামি হুমায়ুন কবিরের জেল আপিল গ্রহণ করে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ এ রায় দেয়।
আদালতে জেল আাপিলের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। এ বি এম বায়েজিদ বলছেন, খালাস হওয়ায় আর কোনো মামলা না থাকলেও তার এখন মুক্তি পেতে বাধা নেই।
নথি থেকে ঘটনার বিবরণী উল্লেখ করে আইনজীবী জানান, ২০০৪ সালের ৩০ জুন লাকসামের কনকশ্রী গ্রামের সাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী সকাল সোয়া ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। বিকেলে স্কুল ছুটি হলে মেয়েটি বাড়ি না ফেরায় তার অভিভাবকরা খোঁজাখুঁজি করে। পরে তারা স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে শিশুটি স্কুলে যায়নি। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ও বিভিন্ন এলাকায় খুঁজে না পেয়ে ওইদিনই থানায় জিডি করেন শিশুটির চাচা মো. জসীম উদ্দিন।
ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়ার পথে মাথা ব্যথায় শিশুটিকে সাকেরা গ্রামের মাস্টার বাড়ির পাশে কালভার্টের ওপর শুয়ে পড়তে দেখেন। এ সময় আরো ৫-৬ জন লোক ছিল সেখানে। ওই সময় হুমায়ুন কবির এসে সবাইকে তাড়িয়ে দিতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় শিশুটিকে বাড়ি যেতে বললে হুমায়ুন কবির শিশুটির মামা পরিচয় দিয়ে বলেন, সে শিশুটিকে বাড়ি পৌঁছে দেবে। কিন্তু হুমায়ুন কবির বাড়ি পৌঁছে দেয়নি। পরে ওই বছরের ৪ জুলাই ট্রাকচালক হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিনই কালভার্টের পাশে জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় করা মামলায় ২০০৬ সালের ৫ এপ্রিল বিচারিক আদালত হুমায়ুন কবিরকে মৃত্যুদণ্ড দেন। নিয়ম অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে এবং হুমায়ুন জেল আপিল করেন। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডদেশ বহাল রাখেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন হুমায়ুন। এই আপিলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার তার আপিল মঞ্জুর করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।
পরে আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, এ মামলায় ক্রেডিবল সাক্ষী ছিল না। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শিশুটির মরদেহ উদ্ধারের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেখানে ছিলেন। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিচারের সময় জেরা করা হয়নি।
এছাড়া হুমায়ুন কবির তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, শিশুটি তার খালাতো বোনের মেয়ে। শিশুটির বাবা তার কাছে ১৬০০ টাকা পেতেন। কিন্তু শিশুটির বাবা সাক্ষ্যে বলেছেন- তিনি হুমায়ুনকে চেনেন না। আবার শিশুটির মাকেও এ মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। শিশুটির মাকে সাক্ষী করা হলে জানা যেতো হুমায়ুন কবির আদৌ পরিচিত কেউ কিনা। ফলে এখানে সন্দেহ রয়ে গেছে।
/এন এইচ