দেশজুড়েপ্রধান শিরোনামব্যাংক-বীমাশিল্প-বানিজ্য

হুন্ডির সুযোগ কমায় রেমিট্যান্সে চমক

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ অর্থবছরের শুরুতেই অবিশ্বাস চমক এসেছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। করোনাভাইরাস মহামারীর চলমান সংকটের মধ্যেই তৈরি হয়েছে রেমিট্যান্সের রেকর্ড।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে এর আগে কখনো এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। গত জুন মাসের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ দশমিক ৮৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন সেই রেকর্ড ভেঙে গেছে জুলাইয়ে প্রথম ২৭ দিনেই। এদিনই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পরপর দুই মাসের এ ধরনের রেকর্ডের পেছনে হুন্ডির মতো অবৈধ চ্যানেলগুলোতে সুযোগ কমে যাওয়া।

অভিবাসন বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর গবেষণায় বলা হয়, গত কয়েক মাস রেমিট্যান্স প্রবাহের ঊর্ধ্বগতি দেখা দেওয়ার পেছনের কারণ অবৈধ পথ বন্ধ হওয়া। জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ থাকায় প্রতিটি ভিসা কিনতে রিক্রুটিং এজেন্টরা যে ১ থেকে দেড়/দুই হাজার ডলার হুন্ডি করত তা প্রয়োজন হচ্ছে না, সেই সঙ্গে আমদানি কমে যাওয়ায় আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে হওয়া হুন্ডিও কমেছে। এসব কারণে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলেই রেমিট্যান্স আসছে। জনশক্তি গবেষকরা বলছেন, দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বৈধ চ্যানেলের ঝামেলা এড়াতে অবৈধ চ্যানেল বেছে নিয়েছিলেন প্রবাসীরা। বিদেশে অবস্থিত ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, মানি লন্ডারিং বিষয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ির কারণে রেমিট্যান্স পাঠানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। জানা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে হলে আয়ের বৈধ সনদ দিতে হয়। একইভাবে পাঠানো অর্থের সুবিধাভোগীদের পুরো তথ্য দিতে হয়।

তাছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচও ছিল বেশি। এর ফলে অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলকে হয়রানি মনে করে বিকাশসহ হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। তবে গত অর্থবছরের মতো রেমিট্যান্স বাড়াতে চলতি অর্থবছরও এ খাতে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে গত বছর থেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের বড় অংশ আসে। সেসব দেশের অবস্থাও ভালো নয়। তেলের দাম কমছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড না থাকায় অনেক মানুষ বেকার হয়ে দেশে ফিরে আসছেন। এ অবস্থায় রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ার ভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তারা বলেন, বিদেশে থাকা কর্মীরা তাদের শেষ সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন কিনা, তাও ভেবে দেখা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, আগে অনেকেই বিভিন্ন অবৈধ পথে টাকা পাঠাতেন। এখন সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে। তার ওপর ব্যাংকিং মাধ্যমে অর্থ পাঠানো আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। তবে, কোরবানির ঈদের আগে সবসময়ই রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকটাই বেড়ে যায়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘হঠাৎ রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। সাধারণত কোরবানির সময় দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেড়ে যায়। এ সময় কোরবানির জন্য পরিবারের কাছে কিছু অতিরিক্ত অর্থ পাঠান অনেকে। সে কারণেও রেমিট্যান্স বাড়তে পারে। হুন্ডির সুযোগ কমে যাওয়াতেই করোনা মহামারীর মধ্যেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করে অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরু। সোমবার রামরুর উদ্যোগে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এ সময় বলা হয়, প্রবাসী শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা করোনায় আর্থিক বিপর্যয়ে পড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকার জন্য সরকারের সময়োপযোগী ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। পাশাপাশি ২৭ জুলাই পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ৩০ জুন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৬ দশমিক ০১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে যেটি ছিল সর্বোচ্চ। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে তা পৌঁছেছে ৩৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ডে। এর আগে ২০১৯ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৬ দশমিক ৭১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত এক বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে রেমিট্যান্সের অন্তঃপ্রবাহ।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Тест на Rychlý IQ test: houbu v lese najdete do 5 Ve hře Hádanku každý pátý vyřeší: Najděte 'divokou' chybu v místnosti za 5 sekund: jednoduchý IQ Chyba na obraze: najděte ji
Close
Close