কৃষিশিল্প-বানিজ্য
হালদা পাড়ে উৎসবের বন্যা
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রুপালি সম্পদের খনি খ্যাত দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। গতকাল হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা ১২ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ ডিম আহরণ করেছেন। রেকর্ড পরিমাণ ডিম আহরণের পর হালদার দুই পাড়ের ঘরে ঘরে চলছে ‘ঈদ আনন্দ’। হালদা পুরনো রূপে ফিরে যাওয়ায় খুশি ডিম আহরণকারী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা। সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণেই হালদা হারানো যৌবন ফিরে পাচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্র্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘নানানমুখী পদক্ষেপের কারণে হালদা ধীরে ধীরে পুরনো রূপে ফিরে যাচ্ছে। গত ৪ বছর ধরে হালদায় ডিম আহরণের পরিমাণ বাড়ছে। এ বছর তো নিকট অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সাড়ে ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।’
জানা গেছে, কয়েকদিন আগে নমুনা ডিম ছাড়ার পর থেকেই হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুতি নিতে থাকেন ডিম আহরণের। গত বৃহস্পতিবার রাতে মা মাছ ফের নমুনা ডিম ছাড়লে নদীর দুই পাড়ে শুরু হয় অপেক্ষা। হালদা নদীর গড়দুয়ারা, কান্তার আলী চৌধুরী ঘাট, সত্তার ঘাট, অংকুরী ঘোনা, মদুনাঘাট, নাপিতের ঘোনা ও মার্দাশাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন হালদা পাড়ের ৬১৫ ডিম সংগ্রহকারী। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ২৮০ নৌকা দিয়ে সংগ্রহ শুরু হয় ডিম আহরণ। একটানা কয়েক ঘণ্টা হালদার বিভিন্ন পয়েন্টে চলে ডিম আহরণ। একেকজন ডিম সংগ্রহকারী ৩০ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত ডিম আহরণ করেন। সব মিলিয়ে এবার হালদা থেকে আহরণ করা ডিম পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি, যা গত ১২ বছরে রেকর্ড সর্বোচ্চ ডিম আহরণ।
হালদার গত কয়েক বছরের ডিম সংগ্রহের পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৯ সালে ৭ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি (নমুনা ডিম) কেজি, ওই বছর পুরো মাত্রায় ডিম ছাড়েনি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৪ সালে ৫ কেজি, ২০১৩ সালে ৬২৪ কেজি এবং ১২ সালে ১৬০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।
হালদার ডিম সংগ্রহকারী গড়দুয়ারা এলাকার কামাল সওদাগর বলেন, ‘অনেক বছর পর হালদা পুরনো রূপে ফিরেছে। এবার প্রচুর ডিম সংগ্রহ করেছি। গত ১০ বছরে এবারের মতো ডিম পাইনি।’ হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘হালদাকে আগের রূপে ফেরাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
গত এক বছরে হালদার মা মাছ রক্ষা করতে ১০৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে ড্রেজার, ঘেরা জাল, বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহার করা পাইপ ও নৌকা। সবার সম্বিলিত প্রচেষ্টায় হালদা পুরনো রূপ ফিরে পাচ্ছে।’ রুপালি সম্পদের খনি হিসেবে খ্যাত হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা কার্প জাতীয় মাছের ডিম দিয়ে এক সময় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মাছ চাষিদের পোনার চাহিদা পূরণ করত হালদা নদী। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে দূষণ ও আগ্রাসনের কবলে পড়ে ঐতিহ্য হারাতে বসে হালদা। এক সময় ডিম সংগ্রহ প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি নানামুখী তৎপরতার কারণে ফের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে থাকে হালদা।
/আরএম