দেশজুড়ে
‘স্যার, থ্রি-পিসটা পরতে দেন, পেটের দায়ে ক্যাসিনোতে আসি’
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাব নামক জুয়ার ক্যাসিনো, বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারের গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামক ক্যাসিনো, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের ক্যাসিনো ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ এরকম আরও অনেক জুয়ার ক্যাসিনোতে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
এসব ক্যাসিনো থেকে নারী-পুরুষসহ ১৮২ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে এক বছর করে এবং বাকিদের ৬ মাস করে কারাদণ্ড দেন র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এবং র্যাব-৩ (সিপিসি-৩) এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান। অভিযান চলাকালে এসব ক্যাসিনো সিলগালা করা হয়। উঠে আসে অজানা লোমহর্ষক নানা তথ্য।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে দেখা মেলে ওয়েস্টার্ন পোশাকের দুই তরুণীর। যারা ওই ক্যাসিনোর কর্মী বলে জানা যায়।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, ওই দুই তরুণীকে আটকের সময় তারা বারবার একটি কথাই শুধু বলছিলেন- ‘স্যার, আমাদের থ্রি-পিসটা পরতে দেন। ক্যাসিনোতে পেটের তাগিদে চাকরি করতে আসি। ওয়েস্টার্ন ড্রেস না পরলে চাকরি থাকবে না। এখানে সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো। খারাপ কাজের কোনও সুযোগ নেই। জুয়ার বোর্ডে চাকরি করাটাই কি অপরাধ?’
জবাবে ওই র্যাব সদস্য নারী ক্যাসিনো কর্মীদের বলেন, ‘স্যারদের অর্ডার নেই’। দুই তরুণীর একজন নিজেকে রিসেপশনিস্ট ও আরেকজন জুয়ার বোর্ডের কার্ড সরবরাহকারী পরিচয় দেন। রিসেপশনিস্টের বেতন ২১ হাজার আর কার্ড বিতরণকারীর ১০ হাজার। তাদের চাকরি দৈনিক ১২ ঘণ্টা। গত দেড় মাস যাবত এই দুজন চাকরি করছেন বলে জানান।
ওই নারী ক্যাসিনো কর্মীরা র্যাব সদস্যদের আরও জানান, তারা মোট ৬ জন নারী পালাক্রমে ডিউটি করেন। তাদের স্বামী এখানে চাকরির কথা জানেন। তবে পরিবারের অন্যরা জানেন না। তারা বারবার নিজেদের নিরপরাধ দাবি করেন।
এরআগে বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় ইয়ংমেনস ক্লাবের নিষিদ্ধ জুয়ার ক্যাসিনোতে অভিযান শুরু করে র্যাব। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। ক্যাসিনোতে জুয়ার ফাঁকে ফাঁকে মদ্যপান চলছিল বলে জানিয়েছেন র্যাব সদস্যরা। অভিযানের আগে থেকেই ক্লাবটি ঘিরে রাখেন র্যাবের সদস্যরা। তারা দুপুর থেকে সেখানে কাউকে ঢুকতে এবং বের হতে দেননি।
অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযানের সময় ভেতরে থাকা এবং ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা অবস্থায় ১৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, এই ক্লাবে আট মাস ধরে অবৈধ আসর বসছিল। এসময় আমরা দেখি, ক্লাবের নিচতলায় যন্ত্রের মাধ্যমে জুয়া খেলা (ক্যাসিনো) চলছে। এছাড়া জুয়া খেলার ফাঁকে ফাঁকে চলছে মদ্যপানও।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এই ক্লাবে এসেছেন তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আটক ব্যক্তিদের মদপানের লাইসেন্স নেই। এমনকি ইয়াংমেনস ক্লাবেরও মদ বিক্রির লাইসেন্স নেই। এসময় জুয়া খেলার ২৪ লাখ টাকাও জব্দ করা হয়।’
ওই ক্যাসিনোতে অভিযানের পরই অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশান-২ এলাকায় নিজ বাসা থেকে অস্ত্রসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব।
/আরএম