দেশজুড়ে
স্কুলছাত্রীকে দিয়ে দেহব্যবসা, পালিয়ে এসে বখাটের অত্যাচারে আত্নহত্যা
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বখাটের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মাগুরার শালিখায় এক স্কুলছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। উপজেলার হরিশপুর গ্রামের গোলাম কিবরিয়া মেয়ে মিতা স্থানীয় গোবরা পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
গত বুধবার (২৪ জুলাই) স্কুলে গিয়ে বিষপান করে মিতা। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল ও পরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি তাকে। ওই রাতেই পৃথীবির মায়া ছেড়ে চলে যায় মেয়েটি। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় নিজ গ্রামে দাফন করা হয় তাকে।
মিতার বাবা গোলাম কিবরিয়া জানান, যশোরের চুড়ামনকাঠি এলাকার সানি ওরফে রাজা হরিশপুর গ্রামে তার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে আসা-যাওয়ার সুযোগে মিতার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। পরে, কৌশলে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এক বছর আগে স্থানীয় গোবরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে তার নাবালিকা মেয়েকে সানি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে দেহব্যবসা চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ ঘটনায় তিনি শালিখা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহরণের ১৫-১৬ দিন পর ঢাকার কাফরুল এলাকার একটি বাসা থেকে মিতাকে উদ্ধার করে।
এসময় তাকে আটকে রেখে জোরপূর্বক দেহব্যবসা করানোর অপরাধে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার কাছিহারা গ্রামের গোলজার শেখের ছেলে নাজমুল শেখ ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার খাসতাবক গ্রামের মৃত ইউনুস আলীর স্ত্রী শাহিদা বেগমকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় মিতার বাবা শালিখা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে নাজমুল, শাহিদা ও সানির নামে মামলা দায়ের করেন। সানিকে আটক করতে না পারলেও ঢাকা থেকে আটক দুই জনকে ওই মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পরে, কিছুদিন পর দুই আসামি জামিনে বের হয়ে আসেন।
গোলাম কিবরিয়া জানান, তার মেয়ে বাড়ি ফিরে সুস্থ্য হয়ে আবারও লেখাপড়া শুরু করে। এবছর অষ্টম শ্রেণীতে ভালো ফলাফল করে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয় সে। কিন্তু, সম্প্রতি সানি ও নাজমুল তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মোবাইলে ও বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে তাকে চাপ দিতে থাকে। মোবাইল ফোন ও মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে মিতাকে উত্যক্ত করতে থাকে সানি। মামলা তুলে না নিলে তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যার ভয়ভীতি দেখানো হয়।
প্রতিনিয়ত তাদের এ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে স্কুলে গিয়ে মিতা বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতাল ও পরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়ার পর ওই রাতেই সে মারা যায়।
মিতার বাবা বলেন, বিষপানের পর সে বারবার বলছিল, সানি-নাজমুল আমাকে বাঁচতে দিল না।
বখাটের অত্যাচারে স্কুল পড়ুয়া মেয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করলেও এ নিয়ে কোনো মামলা করবেন না বলে জানান গেলাম কিবরিয়া। কারণ, তার ভয়, একবার মামলা করে তার মেয়ের জীবন গেছে। এবার মামলা করলে তাকেও মরতে হবে। তাছাড়া, দারিদ্র্যের কারণে মামলার খরচ চালানোও তারপক্ষে সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, বখাটের প্ররোচণায় মেয়ের জীবন গেলেও মূল অভিযুক্ত সানির আত্মীয়-স্বজন ও ঢাকায় বসবাসকারী গোলাম কিবরিয়ার এক ভাতিজার চাপে তিনি মামলা করতে সাহস পাচ্ছেন না। সাংবাদিকদের কাছে মেয়ে মৃত্যুর তথ্য দেওয়ায় ওই চক্রটির হুমকিতে তিনি এখন কারও সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন না। এমনকি, তার মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
শালিখা থানার অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম বলেন, হরিশপুর গ্রামের স্কুলছাত্রী মিতার আত্মহত্যার বিয়ষটি শুনেছি। পরিবার অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মিতার বাবার দায়ের করা মামলাটি মাগুরা আদালতে বিচারাধীন বলেও জানান তিনি।
/আরএম