ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ তিন মাস অন্তর বিভিন্ন ক্রনিক অসুখের গতিবিধি জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ, নিয়মনিষ্ঠ ভাবে শরীরচর্চা, ডায়েট— নিজের যত্ন নিতে এই বিষয়গুলির প্রতি খেয়াল রাখাটা জরুরি বলেই মত চিকিৎসকদের। কিন্তু এই কর্মব্যস্ত সময়ে এত নিয়মকানুন মেনে চলার ফুরসতই বা কই!
তবে অসুখ ধরা পড়ার পর চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার চেয়ে রোগকে ঠেকিয়ে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর তাই একটা বয়সের পর কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়ে রাখাকেই সুস্থ থাকার পথ হিসেবে বাতলাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অনেক অসুখই নিঃশব্দে বাস করে শরীরে। লক্ষণও প্রকাশ পায় না। বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছলে তবেই জানান দেয়। তাই উপযুক্ত পরীক্ষা না করালে চিকিৎসা শুরু হতেও দেরি হয় ও ক্ষতির শঙ্কা থেকে যায়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘‘বয়স ৩০ পেরলেই কিছু কিছু পরীক্ষা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেমন শরীরের কলকব্জায় মরচে ধরতে শুরু করে, তেমনই কিছু অসুখও বয়স বুঝেই কোপ মারে। কোনও দিন কোনও সমস্যা না হওয়া শরীরেও ৩০-এর পর ঘাঁটি বানাতে পারে কিছু বিশেষ ধরনের অসুখ। সব অসুখের উপলক্ষ যে বোঝা যাবেই এমনটাও নয়। তাই তিরিশের কোঠায় বয়স পৌঁছনোর পরেই অন্তত ছ’মাস বা এক বছর অন্তর মূল পাঁচটি পরীক্ষা করিয়ে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।’’
ইসিজি: হৃদযন্ত্রের গতিবিধি জানতে, কোনও জটিলতা সেখানে ঘাপটি মেরে আছে কি না তা বুঝতে বয়স ৩০ পেরলেই ৬ মাস অন্তর ইসিজি করান। যাঁরা এই বয়সে পোঁছনোর আগেই কোনও রকম হৃদরোগের শিকার হয়েছেন, তাঁরা ইসিজি-র পরিবর্তে বছরে এক বার টিএমটি করিয়ে রাখুন। হৃদযন্ত্রে কোনও প্রকার সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি না, ব্লক রয়েছে কি না এগুলো জানতে বিশেষ সাহায্য করে টিএমটি। যত দ্রুত নির্ণীত হবে সমস্যা, তত তাড়াতাড়ি শুরু করতে পারবেন চিকিৎসা। অনেক সময় ওষুধের চেয়ে জীবনযাপনের কোনও কোনও দিক পরিবর্তন করেও কিছু অসুখ রুখে দেওয়া যায়।
জেনেটিক পরীক্ষা: বয়স এত দিন শরীরে যা প্রচ্ছন্ন ভাবে ছিল, মিউটেশনের ফলে সে সব অসুখই প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে। জিনগত কোনও অসুখ দেখা দিচ্ছে কি না তা বুঝতে বছরে এক বার অন্তত জেনেটিক টেস্ট করিয়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ডিএনএ পরিবর্তন, ক্যানসারের ঝুঁকি ইত্যাদি বুঝতে এই ধরনের পরীক্ষা বিশেষ কার্যকরী।
লিপিড প্রোফাইল: অনিয়মিত জীবনযাপন, খাওয়াদাওয়ার ভুল, শরীরচর্চায় ঢিলেমি ইত্যাদির হাত ধরে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। কমতে থাকে ভাল কোলেস্টেরল। বিলিরুবিনের মাত্রার তারতম্য ঘটতে শুরু করে। এসজিপিটি, এসজিওটি-র মাত্রাও কম-বেশি হতে শুরু করে নানা অনিয়মের হাত ধরে। বয়স ৩০ পেরনোর পর থেকেই এই প্রবণতা দেখা যায়। তাই বছরে দু’বার সম্পূর্ণ লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
লিভার ফাংশন: অনিয়ম শুধু রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায় এমনই নয়, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্ষতি করে যকৃতেরও। বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়লে যেমন হেপাটাইটিসের শঙ্কা বাড়ে, তেমনই কিছু উৎসেচক, প্রোটিন ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা এদিক-ওদিক হলেও লিভারের অসুখ দানা বাঁধে। তাই সতর্ক থাকতে বছরে এক বার সম্পূর্ণ লিভার ফাংশন টেস্ট করিয়ে রাখুন।
প্যাপ স্মিয়ার: মহিলাদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা ৩০-এর পর থেকেই সমান গুরুত্বপূর্ণ। জরায়ুমুখের ক্যানসার শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে এটি একটি সহজ পরীক্ষা। ইদানীং কালে জরায়ুমুখের ক্যানসারের পরিমাণ যে হারে বেড়েছে, তাতে এই বছরে অন্তত এক বার এই পরীক্ষা করিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
/এন এইচ