দেশজুড়ে

সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিল বহালের দাবিতে বাস ধর্মঘট

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিল বহাল রাখার দাবিতে আজও বেশ কয়েকটি কোম্পানির বাস চালাচ্ছেন না শ্রমিকরা।

রাজধানীতে কোনো সিটিং সার্ভিস থাকবে না, বাস চলবে না ওয়েবিলে। মালিক সমিতি এমন সিদ্ধান্ত নিলেও, বাস মালিকরা তা মানছেন না। এ নিয়ে পথে পথে যাত্রীদের সঙ্গে বাসচালক আর শ্রমিকদের বিরোধ বাধছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে হঠাৎ করেই মিরপুর এলাকায় বিভিন্ন রুটের বাস থেকে যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে দেয় শ্রমিকরা। যাত্রীদের দাবি, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকেও বেশি ভাড়া আদায় করছে শ্রমিকরা। আর শ্রমিকদের দাবি, যাত্রীরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিলেও, মালিকপক্ষ এখনো ওয়েবিলের নির্ধারিত বাড়তি ভাড়া হিসাব করে দিন শেষে টাকা চায়। এতে সারাদিন গাড়ি চালিয়েও দিন শেষে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে বলে দাবি শ্রমিকদের।

এর আগে চলতি মাসের প্রথম দিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকে পরিবহন সংগঠনগুলো। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সারা দেশের মানুষ। তখন সরকার বাসের বাড়া বর্ধিত করলে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। এবং বাসে নতুন ভাড়া কার্যকর করা হয়। যাত্রীদের ভোগান্তির কথা ভেবে ১০ই নভেম্বর দুপুরে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। ১৪ই নভেম্বর থেকে রাজধানীতে সব ধরনের সিটিং সার্ভিস বন্ধ কার্যকর করতে বাসের মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশনা দেন। এমন নির্দেশনার পরেও বাসের স্টাফরা সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিলের নামে ভাড়া আদায় করতে থাকে। এতে বর্ধিত ভাড়ার চাইতে বেশি ভাড়া আদায় নিয়ে বাসের যাত্রীদের সঙ্গে চালক-হেলপারদের প্রায় বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। গতকালও যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা বাধলে বাস বন্ধ রেখে ধর্মঘট শুরু করেন শ্রমিকরা।

এদিকে বাসের স্টাফরা জানান, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রামপুরায় অছিম পরিবহনের কয়েকজন যাত্রী ও বাসের কর্মচারীদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মিরপুর রোডের বেশকিছু বাসের কর্মচারীদের সঙ্গে অফিসগামী যাত্রীদের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বাসের যাত্রীরা সিটিং সার্ভিসের ভাড়ায় যাতায়াত করতে চাচ্ছে না। সেভাবে ভাড়াও দিচ্ছে না। এনিয়ে প্রতিদিনই নানা ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে শ্রমিকদের। আমরা সিটিং সার্ভিস চালাতে চাই। ওয়েবিল চালুর দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত বাস বন্ধ থাকবে। চালকদের দাবি, ওয়েবিলের কারণে প্রতিদিনই ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়াতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে, মালিকদের পক্ষ থেকেও ওয়েবিল অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। এসব নিয়ে চালক-হেলপারদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, বাসের মালিক সমিতির নেতারা সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছেন। সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়ায় এখন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারছে না বাসের স্টাফরা। এতে তারা হঠাৎ করেই বাস বন্ধ রাখছে।
যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, কয়েকদিন আগে বাসের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাসে বাসে ভাড়ার চার্ট টানানো হয়েছে। তারপরও বাসের হেলপাররা তাদের মনগড়া ভাড়া আদায় করে আসছেন। চার্ট টানানো থাকলেও অধিকাংশ বাসে তা মানা হচ্ছে না। এ ছাড়া সাধারণ যাত্রীরা ভাড়ার চার্টের হিসাব বুঝতে পারে না। ফলে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এনিয়ে অধিকাংশ যাত্রীর সঙ্গে বাস স্টাফদের কথাকাটাকাটি হয়। অনেক সময় যাত্রীদের হয়রানি করা হয়। ওয়েবিলের নামে মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। কিলোমিটার কিংবা সরকারের কোনো নির্দেশনাই মানছে না তারা। এখন আবার সিটিং সার্ভিস চালু রাখার দাবিতে বাস বন্ধ রেখে শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করছে। যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে।

মিরপুর থেকে উত্তরা-আবদুল্লাহপুরগামী বাসের সকল যাত্রীদের কালশী মোড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে গাড়িগুলো সেখানে সারি সারিভাবে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে শত শত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। পরে হেঁটে ও রিকশায় গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা গেছে যাত্রীদের।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আজমল উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি সিটিং সার্ভিস বন্ধ থাকবে। ঢাকায় সকল রুটে লোকাল বাস চলবে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত বর্ধিত ভাড়ার চেয়ে কোনো বাস যেন বাড়তি ভাড়া আদায় করতে না পারে তার জন্য মালিক সমিতি সক্রিয় আছে। আমরা চাই সকল সিটিং সার্ভিস বন্ধ থাকবে। তবে হঠাৎ করে শ্রমিকরা বাস বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ফেডারেশনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। বাস চালু রাখার চেষ্টা করছি।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ভাড়া নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে চালকদের একটি অংশ বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। বাস চলাচল দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে। সরকারি নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওয়েবিলের নিয়ম অচিরেই বন্ধ করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close