কৃষিপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য
সারাবিশ্বে চাহিদা বাড়ছে বাংলাদেশের চায়ের
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও বিশ্বে চাহিদা বেড়েছে বাংলাদেশের চায়ের। গত অর্থবছরে যেখানে বেশিরভাগ পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে, সেখানে এ পণ্যটির আয়ে বছরজুড়েই ছিল ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি। শুধু তাই নয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে চা রপ্তানিতে রেকর্ড পরিমাণ ১০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জুলাইয়ে পণ্যটির রপ্তানির টার্গেট ধরা হয়েছিল দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলার। মাস শেষে হিসাব করে দেখা গেছে দশমিক ৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে চা রপ্তানি করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার কারণে বিশ্বে যেসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে তার মধ্যে ওষুধ ও ওষুধজাত পণ্য রয়েছে। এর পাশাপাশি কৃষিজাত পণ্য হিসেবে চা রপ্তানিও বেড়েছে। কারণ কভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে চা একটি গুরুত্বপূর্ণ পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী পণ্যটির অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বে চা রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত বড় ভূমিকা রাখলেও করোনার কারণে দীর্ঘসময় লকডাউনে থাকায় দেশটির চা বাগানগুলো থেকে চা পাতা তোলা হয়নি। ফলে পার্শ্ববর্তী দেশটিতে অভ্যন্তরীণভাবেই চায়ের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চায়ের চাহিদা বেড়েছে অনেক দেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ইরান, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের প্রচুর চাহিদা তৈরি হয়েছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চা রপ্তানি করে মোট আয় হয়েছিল ২ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার। সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। করোনাকালে যে ১৬টি পণ্য প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ইতিবাচক রপ্তানি আয় ধরে রেখেছে তার মধ্যে চায়ের অবস্থান ৮ম। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে পণ্যটির রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে সেই প্রবৃদ্ধি এক লাফে বেড়ে ১০০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বলেন, করোনাকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের চায়ের প্রচুর চাহিদা তৈরি হয়েছে। ফলে মহামারীতেও পণ্যটির রপ্তানি ব্যাপক বেড়েছে। তবে সম্ভাবনা থাকলেও চা খুব বেশি রপ্তানি করা যাচ্ছে না। রপ্তানি আয় এখনো কয়েক মিলিয়ন ডলারেই আটকে আছে। তিনি বলেন, দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়ছে, পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদাও বাড়ছে। সে কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের চা নেওয়া জন্য আগ্রহ প্রকাশ করা হলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে খুব বেশি রপ্তানি করা যাচ্ছে না পণ্যটি। চা উৎপাদনে ১৬৫ বছরের রেকর্ড : রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি গত বছর দেশের চা উৎপাদনেও রেকর্ড হয়েছে। ১৬৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়ে ২০১৯ সালে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়েছে দেশে। আলোচ্য সময়ে ৮ কোটি কেজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তার চেয়ে প্রায় দেড় কোটি কেজি বেশি উৎপাদিত হয়েছে পণ্যটি।
দেশে চা শিল্পের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এত পরিমাণ চায়ের উৎপাদন হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটের মালনীছড়ায় ১৮৫৪ সালে দেশের সর্বপ্রথম চা-বাগান স্থাপনের পর ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ কোটি কেজি উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল। গত মৌসুমে তার চেয়েও এক কোটি কেজি উৎপাদন বেড়েছে। লন্ডনভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটি’র প্রতিবেদন অনুসারে, চা উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান একধাপ এগিয়ে গত বছর ৯ম স্থানে উন্নীত হয়েছে। চীন ও ভারত পণ্যটি উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
এক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দশম স্থানে। তবে উৎপাদন বাড়ায় ২০১৯ সালে ওই অবস্থানে এক ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। উৎপাদনের দিক দিয়ে এখনো বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর ইরান, মিয়ানমার, জাপানের মতো দেশগুলো বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, উৎপাদনের সঙ্গে তালমিলিয়ে বেড়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা। দেশে পণ্যটির প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে
। বাংলাদেশ চা বোর্ডের সচিব কুল প্রদীপ চাকমা জানান, ২০১৮ সালে ৮ দশমিক ২ কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল, ওই বছর অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল ৮ দশমিক ৬ কেজি। ফলে তখন দেশের জন্য চা আমদানি করতে হয়েছিল। তবে গত বছর প্রায় দেড় কোটি কেজি চা উৎপাদন বেড়েছে। এ ছাড়া সিলেটের পাশাপাশি পঞ্চগড়েও চা উৎপাদন হচ্ছে। দেশের প্রায় ১২ ভাগ চা সেখানে উৎপাদন হয়। বাগানগুলোর মানোন্নয়নের মাধ্যমে আরও বেশি চা উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বিটিবির সচিব আরও বলেন, চা শিল্পের উন্নয়নে সরকার ‘উন্নয়নের পথনকশা’ গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়ন চলছে। ২০২৫ সালে দেশে ১৪ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।