আমদানি-রপ্তানীপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য
সাভার ট্যানারিতে ঢুকছে পশুর চামড়া, হতাশ বিক্রেতারা
স্মরণকালের কম দামে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি
রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধি: ঈদের দিন দুপুরের পর থেকেই সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে কাঁচা চামড়া ঢুকতে শুরু করেছে। কিন্তু সরকারের দাম বেঁধে দিয়েই দায়িত্ব শেষ, মাঠপর্যায়ে তা মানা হচ্ছে কিনা, তার কোনো তদারকি নেই সরকারের। আর এ অবস্থার সুযোগে স্মরণকালের সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। রাজধানীতে নির্ধারিত দামের অর্ধেকেও চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। যার সম্পূর্ণ দায় ট্যানারি মালিকদের দিচ্ছেন তারা। যদিও তা অস্বীকার করে দরপতনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের।
কোরবানিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে কয়েক লাখ মৌসুমি ব্যবসায়ী, সাময়িক সময়ের জন্য অর্থলগ্নি করেন চামড়া ক্রয়ে। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে যা প্রবেশ করে ট্যানারিতে। বিপুল সংখ্যক চামড়া কেনাবেচায় শৃঙ্খলা ধরে রাখতে সরকারও বেধে দেয় দাম।
রাজধানীর মিরপুর থেকে ঈদের দিন চামড়া বিক্রি করতে আসা ব্যক্তি জানান, আমরা সাভারের ভুলুয়া ট্যানারীতে চামড়া দিতে এসেছি। কিন্তু আসার পর তারা অজুহাত দেয় চামড়া সাইজ ছোট, এগুলো রাখা যাবে না। রাখলেও কম দাম পাবো। মুলত ট্যানারি মালিকরা দাম কম দেয়ার জন্য এমন কৌশল অবলম্বন করছেন। সরকার যেন এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে নজরদারী করেন।
চামড়া ব্যবসায়ী মো. আবুল বাশার জানান, বিশ্ববাজারে ক্রেতা কম। এই জন্য চামড়া দাম কম, এমন দোহাই দিচ্ছেন ট্যানারী মালিকরা। তবে কি কারনে বিদেশী ক্রেতা আগের চেয়ে কম? এটা সরকার ও ট্যানারী মালিকরাই বলতে পারবেন।
কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে এবার। রাজধানীতে বেধে দেয়া দামের অর্ধেকে নেমেছে কাঁচা চামড়ার দাম। প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া যিক্রি হচ্ছে গড়পড়তা ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। গড়ে প্রতিটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। চামড়া ক্রয়ে ট্যানারি মালিকদের অনীহার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি, বলছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
সাভারের ভুলুয়া ট্যানারি লিমিটেডের সুপারভাইজার শাহ আলম বলেন, বিগত বছুরগুলোতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাদা দর থাকলেও, ট্যানারি স্থানান্তরের পর এখন ৫ থেকে ৬ শত টাকা চামড়া কিনতেও কষ্ট হচ্ছে ট্যানারি মালিকদের। এছাড়া বিশ্ব বাজারে বিশেষ করে চায়নাতে মালের চাহিদা কম থাকায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলেও দাবী করেন তিনি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ ঢাকা অর্থনীতিকে জানান, চামড়ার কম দামের ক্ষেত্রে আমাদের কোন হাত নেই। যারা আড়ৎদার রয়েছে তারাই ভালো বলতে পারবেন। বরং আমরা সরকারের বেধে দেয়া দাম দিয়েই আড়ৎদারে কাছ থেকে চামড়া কিনতে হবে। তিনি আরও জানান, গত ট্যানারীতে কোরবানির ঈদের মৌসুমে প্রায় ৮০ লাখ পশুর চামড়া কেনা হয়েছিলো। এবারও এমন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে সময় মতো ও সঠিক পদ্ধতিতে লবন না দিলে নষ্ট হওয়া আশঙ্কা রয়েছে। এমন কারনে গত বছর প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।
এদিকে , চামড়ার বাজারে ধসের পেছনে সরকারের নজরদারির অভাবকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা।