প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদনসাভারস্থানীয় সংবাদ
সাভারে গোলাপের মৃত্যুপুরী, বাগানেই ঝড়ছে পাপড়ি
শরিফুজ্জামান ফাহিম, নিজস্ব প্রতিবেদক: চোখ জুড়ানো সবুজ, মৃদমন্দ বাতাস, তার মাঝে লাল গোলাপের সারি। প্রকৃতির এমন দৃশ্য দেখতে শত শত মানুষের ঢল নামতো সাভারের গোলাপ গ্রামে। আর বিকেলে পড়ন্ত সূর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাষিদের গোলাপ ফুল মুঠি বেধে বাজারে নেয়ার প্রস্তুতি ছিল নিত্য দিনের কাজ। তবে করোনার তান্ডবে সবই লন্ডভন্ড। নেই বেচা বিক্রি, নেই ব্যস্ততা। অভিমান নিয়ে গোলাপ নিজেই ঝড়ছে গাছে। এমন মহামারিতে লাল গোলাপের আভায় চোখের কোনে জল জমেছে সাভারের গোলাপ চাষিদের।
সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের ছোট কালিয়াকৈর, বাঘনীবাড়ি, মইস্তপাড়া, কাকাবর, সামাইর, কমলাপুর, সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, আকরাইনসহ আশপাশের বেশ কিছু এলাকা নিয়ে গোলাপ গ্রাম। আশির দশকে সাভারের মইস্তাপুর গ্রামে গোলাপের বানিজ্যিক চাষ শুরু হয়। লাভজনক হওয়ায় প্রথমে স্থানীয়দের মাঝে, পরে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গোলাপের আবাদ বাড়তে থাকে। বর্তমানে তিন শতাধিক চাষির ত্বত্তাবধানে প্রায় ৩০০ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের গোলাপ বানিজ্যিকভাবে চাষ হয়। শুধু গোলাপ নয় এখানে চাষ হচ্ছে রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাসসহ বিদেশী কয়েক জাতের ফুল। বেশ ভালোই চলছিল এখানকার চাষীদের জীবন যাত্রা।
তবে করোনার লকডাউনে স্থবির মানুষের স্বাভাবিক জীবন। মুজিব বর্ষ, ২৬ই মার্চ , পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন সামজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করে প্রস্তুতি নিয়েছিল গোলাপ চাষিরা। টানা লকডাউনে বাগানেই ঝরে পড়ছে ফুল। ঋণের টাকায় গোলাপবাগান করে এখন অনেকেই দিশেহারা। ব্যয় হলেও আয় নেই এক পয়সারও।
গোলাপ চাষে প্রতিদিন বিঘা প্রতি খরচ হয় ৩০০-৭০০ টাকা। মাস শেষে ১০-১২ হাজার। তাতে বিঘা থেকে ফুল আসে ৪-৬ বান্ডেল (এক বান্ডেল ৩০০ পোলাপ)। এতে সাড়ে চার লাখ বান্ডেল ফুল ঢাকার শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেচা কেনা পুরোপুরি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের ব্যয় হলেও আয়ের হিসাব শূন্য। প্রতিদিনই গোলাপ চাষিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গেল দুমাসে ক্ষতির পরিমান ২০০ কোটি টাকার উপরে। অথচ প্রতিদিন শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে টাকা, মাসে ৩-৪ বার সেচ দিতে হচ্ছে বাগান মালিকদের।
বাগান মালিক সাদেকুল, ৬ বিঘা জমির উপর গোলাপের চাষ। প্রতিমাসে আয় ছিল লাখ টাকার। বর্তমানে আয় নেই। অথচ প্রতিদিন সেচ, মালি, শ্রমিকদের মজুরিসহ ব্যয় হচ্ছে ২-৩হাজার টাকা। সঞ্চয়ের টাকা প্রায় শেষ। এখন বাগান পরিচর্যা বন্ধ হলে সামনের ফলন ভাল হবে না। তাই অনিশ্চিত ভবিষৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ।
তিনি বলেন- ব্যয় কমাতে ইতোমধ্যে দুজন শ্রমিককে মজুরি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন নিজেই বাগান পরিচর্যা করছেন।এদিকে ক্ষেতে পরিচর্যায় ঘাটতি থাকায় অনেক গাছ শুকিয়ে গেছে।
কামার খান্দা ফুল বাগান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, অত্র এলাকায় প্রায় দু’শত বিঘা জমিতে ফুল চাষ হয়। এক শত পরিবারের আয়ের উৎস এই গোলাপ বাগানগুলো। গত দু’মাস ধরে দেশের এ পরিস্থিতিতে বেচা কেনা পুরোপুরি বন্ধ। নষ্ট হচ্ছে বাগানের ফুল। বাগান শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অনেক পরিবার কষ্টে দিন পার করছে। প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। এই মূহুর্তে জনপ্রতিনিধি ও সরকার সহযোগিতা করলে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। তবে এখনও কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তাদের।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ জানান, করোনা প্রভাবে বর্তমানে সারা বিশ্বের অবস্থা খারাপ। গোলাপ গ্রামের ফুল চাষিরা কোথাও ফুল বিক্রি করতে পারছে না। এতে বাগানেই ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া গোলাপ গাছ প্রতিদিন পরিচর্যা করতে হয়। সামনে আবার অফ সিজন থাকায় কৃষকরা অর্থ সংকটে থাকবেন। তাই সরকারিভাবে স্বল্প সুদে ঋন দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। এছাড়া তালিকা করে তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারন করে সাহায্য করা হবে।